এলডিসি উত্তরণের পরও মেধাস্বত্ব সুবিধা বহাল রাখার দাবি করেছে বাংলাদেশ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরেও বিদ্যমান মেধাস্বত্ব সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা যেন অব্যাহত রাখা হয়, সম্মেলনে সেই দাবি জোরালোভাবে উপাস্থপন করেছে বাংলাদেশ।

রবিবার থেকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিউটিও’র ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২৬ সালের পরও আমরা মেধাস্বত্ব সুবিধা পেতে চাই। এখানে এটা নিয়ে দাবি তুলেছি। কোভিডের কারণে ২টি বছর আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে। এর প্রভাব আরও ৫ বছর থাকবে। তাই আমরা চাই এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৯ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব সুবিধা যেন আমাদের দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, কেবল আমরা এলডিসি উত্তরণ করছি না। আরও অনেকে করছে। সবাই মিলে এই দাবি আমরা করছি। মন্ত্রী বলেন, মসৃণভাবে এলডিসি উত্তরণের জন্য আমাদের এই সুবিধা দরকার। পাশাপাশি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ)’র প্রস্তুতি দেওয়ার জন্য আমাদের এই সুবিধা থাকার প্রয়োজন। বাংলাদেশ ওষুধ উৎপাদনে মুলত মেধাস্বত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। কিন্তু ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ হলে সেই সুবিধা হারাতে হবে।

এছাড়া খাদ্যজাত পণ্যের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানি বন্ধ করার কারণে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই খাদ্যজাত কৃষি পণ্য রপ্তানি বন্ধ না করার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের প্রধান টিপু মুনশি বলেন,‘আজকের সভায় এটা নিয়ে ভাল আলোচনা হয়েছে। খাদ্যের ব্যাপারটা বিশ^জনীন। খাবারের দাম বাড়ছে। এটা রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যদ্ধের কারণে অনেক রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে, ভারত কিছু বন্ধ করেছে। ইন্দোনেয়েশিয়া পামতেল বন্ধ করেছিল। বৈশ্বিক পরিমন্ডলে এই কথা বারবার উঠে আসছে। তবে কেবল বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য নয়, পুষ্টির বিষয়টিও উঠে এসেছে। পুষ্টিকর খাবার না পেলে একটা শিশু পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারবে না। পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা গড়ার ব্যাপারে ডব্লিউটিও এবং এলডিসির দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি উল্লেখ করেন বাংলাদেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু প্রতিবছর ২ মিলিয়ন শিশু জন্ম নিচ্ছে। এরপর রোহিঙ্গারা শরানার্থীরা যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে। সবদেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে বাংলাদেশ এই ইস্যুতে কাজ করতে চাই বলে তিনি জানান। মন্ত্রী গতকাল সিঙ্গাপুর ও নেপালের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তিনি সিঙ্গাপুরকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নেপাল বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, এলডিসি উত্তরণের পরও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে বলে আশা করছি।

সূত্র-বাসস

ডব্লিউজি/এএইচ

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *