
রায়পুরে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ১৪টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১০টি ভবনকে মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ২৪টিতে এখনও সেবা কার্যক্রম চলছে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে আটটি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ক্লিনিক থেকে পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ জনগণ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ লাখ জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৯৯৯-২০০০-২০০১ অর্থবছরে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এসব পাকা ভবন দৈর্ঘ্যে ২৮ ফুট এবং প্রস্থে ১৬ ফুট। এক দশক পার না হতেই ওইসব ভবনে ফাটল দেখা দেয়।
সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ভবনগুলো পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ১৪টিকে পরিত্যক্ত এবং ১০টিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।
পরিত্যক্ত ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি ভবন হচ্ছে উপজেলার উত্তর চরআবাবিল, দক্ষিণ চরবংশী, উত্তর চরমোহনা, মধ্য রাখালিয়া, উত্তর সোনাপুর, উত্তর-পূর্ব চরপাতা, দক্ষিণ-পূর্ব চরপাতা, সুনামগঞ্জ, কবিরহাট, পূর্ব চরলক্ষী, উত্তর চরলক্ষ্মী, চরকাছিয়া, দক্ষিণ উদমারা ও দক্ষিণ গাইয়ারচর (মিতালি বাজার) কমিউনিটি ক্লিনিক।
মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি ভবন হচ্ছে—জামতুলি সিসি ও ঝাউডুগি সিসি, উত্তর চরবংশী সিসি, দক্ষিণ সোনাপুর সিসি, গাজিনগর, দক্ষিণ কেরোয়া, উত্তর উদমারা ও উত্তর গাইয়ারচর এবং রায়পুর ইউপির দেবীপুর ও কাজিরচর কমিউনিটি ক্লিনিক।
কম ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আছেন। অনলাইনে তথ্য পাঠাতে তাদের একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের চিকিৎসা ছাড়াও প্রসূতি মায়েদের প্রসব-পূর্ব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা দেওয়া হয়। জরুরি ও জটিল রোগী ছাড়াও যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, কালাজ্বরের রোগীদের শনাক্ত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সিএইচসিপিদের সহযোগিতা করার জন্য।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী সপ্তাহে তিন দিন ক্লিনিকে উপস্থিত থাকেন।
সোমবার কেরোয়া ইউনিয়নের সুনামগঞ্জে ডাক্তার আব্দুল হাই ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির চারপাশের দেওয়ালে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ও ফাটল ধরেছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃষ্টিতে পানি পড়ছে। ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
বর্তমানে এসেনশিয়াল ড্রাগসের পরিচালক ডা. এহসানুল কবিরের বাড়ির সামনে কার্যক্রম চলছে। ক্লিনিকের আশপাশের কয়েকজন বলেন, ‘ডাক্তার আবদুল হাই তার জমি বিনামূল্যে ক্লিনিকের নামে লিখে দিয়েছেন। অথচ ভবনে ফাটল, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, নেই বিদ্যুৎ।
এ ক্লিনিকের সিএইচসিপি মিতালি পাল বলেন, প্রতিদিন এ ক্লিনিকে ১০০ জন রোগীকে সেবা ও ওষুধ দেওয়া হয়। ভবন পরিত্যক্ত ও বিদ্যুৎ নেই কয়েক মাস ধরে। ল্যাপটপও নষ্ট। খুব কষ্ট হয়।
৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করলে সিএইচসিপিরা তাদের দুর্ভোগের কথাও জানান।
উত্তর চরআবাবিল সিসি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. সুমন বলেন, ‘ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছি।’
কবিরহাট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নাসিমা আক্তার বলেন, ‘১২ বছর ধরে ভবন পরিত্যক্ত। পরিবেশ খুব খারাপ। ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। জানালার গ্রিলও চুরি হয়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। অনেকবার স্যারদের বলেছি। কেউ কথা শোনেন না। দেখার কেউ নেই।’
দক্ষিণ চরবংশী কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এখানকার সিএইচসিপি আবদুর রহমান বলেন, ক্লিনিকটি কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবেশও খারাপ।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ বাহারুল আলম বলেন, ‘ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের কাছে (সোমবার) বর্তমান অর্থবছরের (২০০৩-২০২৪) লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পবিস) উপজেলা কার্যালয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিঠি দিয়েছে বলে শুনেছি।’