ভৈরব-নরসিংদী কমিউটার ট্রেন চালু: যাত্রীদের স্বস্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা

ভৈরব প্রতিনিধি

অবশেষে দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো ভৈরব ও নরসিংদীবাসীর। (২৬ মার্চ) বুধবার সকাল ৬:৪৫ মিনিটে ভৈরব বাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো নরসিংদী কমিউটার ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সকাল ৯:৩০ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে যাত্রীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

‘এ যেন আমাদের স্বপ্ন পূরণ!’—প্রথম যাত্রায় যাত্রীদের উচ্ছ্বাস
প্রথম দিনেই ট্রেনটিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কর্মজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ট্রেনটির সুবিধা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ভৈরবের বাসিন্দা ও চাকরিজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকায় অফিস করি, প্রতিদিন বাসে যাওয়া-আসা করতে অনেক ভোগান্তি হতো। কখনো যানজটে আটকে পড়তাম, কখনো বসার জায়গা পেতাম না। এই ট্রেন চালু হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারবো এবং কাজ শেষে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারবো।”

এক কলেজছাত্রী সাবিকুন নাহার বলেন, তাদের জন্য এটি বিশাল সুখবর। এখন আর বাসের ধাক্কাধাক্কি করতে হবে না, ট্রেনে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবো।”

একইভাবে, ব্যবসায়ী রাশেদুল হাসান মনে করেন, “এই ট্রেন আমাদের এলাকার ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ। আগে পণ্য নিয়ে ঢাকায় যেতে অনেক সময় লাগতো। এখন কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবো, যা আমাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বাড়াতে সাহায্য করবে।”

‘এটি শুধু ট্রেন নয়, আমাদের উন্নয়নের সেতুবন্ধন’
ভৈরবের স্থানীয় কৃষক মো. হারুন মিয়া বলেন, “আমাদের কৃষিপণ্য এখন দ্রুত ঢাকার বাজারে পৌঁছাতে পারবে। কৃষকদের জন্য এটি বড় সুবিধা।”

একজন নারী যাত্রী, সুমাইয়া আক্তার, যিনি ঢাকা মেডিকেলে নার্স হিসেবে কাজ করেন, বলেন, “নারী যাত্রীদের জন্য এটি অনেক নিরাপদ। বাসে ভিড়ের মধ্যে উঠতে নামতে ভয় লাগত, কিন্তু ট্রেনের পরিবেশ অনেক ভালো।”

ভৈরবের সমাজকর্মী আব্দুল হান্নান বলেন, “এই ট্রেন শুধু একটি বাহন নয়, এটি আমাদের উন্নয়নের সেতুবন্ধন। এতে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।”

ট্রেনের যাত্রীসেবা ও ব্যবস্থাপনা
ভৈরব বাজার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ জানান, “ট্রেনটিতে মোট ৬৫২টি আসন রয়েছে এবং দাঁড়িয়ে দেড় হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতিদিন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ট্রেন চলবে, যাতে যাত্রীদের ভোগান্তি না হয়।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (পরিবহন) শাহ জাহান ট্রেনটির প্রথম যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, “সার্ভিস ঠিক রাখতে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করবো, যাতে যাত্রীরা সঠিক সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পান।”

নিয়মিত ট্রেন চলাচল: নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা
প্রতিদিন দুটি কমিউটার ট্রেন ভৈরব ও ঢাকা থেকে নির্ধারিত সময়ে চলাচল করবে। এতে নরসিংদী, ভৈরব ও আশপাশের এলাকার মানুষ সহজেই রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবেন।

ভৈরবের প্রবীণ নাগরিক আব্দুস সালাম বলেন, “আমার ছোটবেলা থেকেই শুনতাম, আমাদের এলাকার জন্য এমন ট্রেন দরকার। আজ তা বাস্তবায়িত হলো, এটি সত্যিই আনন্দের বিষয়।”

ভৈরবের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আগে বাসে গেলে অনেক সময় চলে যেত। এখন কমিউটার ট্রেন থাকায় আমার জন্য সময় বাঁচবে, পড়াশোনারও সুবিধা হবে।”

এই ট্রেন সার্ভিস চালুর মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। এটি শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি নয়, বরং অর্থনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন এলাকাবাসী।

Recommended For You