ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা চোরাচালানের নিরাপদ রুট

ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকা চোরাচালানের নিরাপদ রুট
চোরাকারবারিদের ‘নিরাপদ রুট’  ফেনী জেলার সীমান্তবর্তী ছাগলনাইয়া উপজেলা। বর্তমানে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল (ফুলগাজী-পরশুরাম) স্থলভাগ দিয়ে চোরাচালানের সুযোগ কম, ঝুঁকিও বেশি। এ জন্য ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্ত এলাকাকে, মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা। মাঝেমধ্যে দু-চারটি চালান আটক হলেও মূল হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। 
অভিযোগ আছে, ছাগলনাইয়ার মহামায়ার সীমান্ত পথে চোরাচালানের বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠপর্যায়ের অনেকেই বিষয়টি জানেন। তারপরও নিয়ন্ত্রণ দূরের কথা, অজ্ঞাত কারণে দিন দিন তা বেড়েই চলেছে।
চোরাকারবারিদের অন্যতম অভয়ারণ্য ছাগলনাইয়া সীমান্ত ঘেঁষা অন্তত ২০ টি গ্রাম। গভীর রাতে ছাগলনাইয়ার সীমান্তে মাদকের হাত বদলের অপেক্ষা করে চোরাকারবারিরা। ফেনী জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা প্রায় ২০ টি গ্রাম পরিচিত মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে। এলাকার শিশু, যুবক কিংবা বয়স্ক, মাদক চোরাচালানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই।
বিজিবি-বিএসএফের নিরাপত্তার মাঝে  চলছে এমন অপকর্ম। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক চোরাকারবারি বলেন, বিএসএফ কে মাসোয়ারা দিয়েই এই মাদকগুলো নিয়ে আসেন। আরেক চোরাকারবারি জানান, আমরা যখন যাই তখন বিজিবির উপস্থিতি থাকেনা।কারণ তাদেরকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয় সরে যাওয়ার জন্য। এছাড়াও ওপর থেকে চাপ আসলেই সবকিছু কল দিয়ে তাদের জানিয়ে দেয়। তাই কেউ কিছু বুঝতে পারে না। এই কাজে বড় অংকের টাকা পাওয়া যায় দেখেই তারা এত ঝুঁকি নেয়।
সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পেতে ভিজিট করুন https://worldglobal24.com/
জানা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গাঁজা, ফেনসিডিল, বিদেশী মদ, ইয়াবাসহ একাধিক মাদক খুবই সহজলভ্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে মাদক কারবারিরা সীমান্ত এলাকার মহামায়া ইউনিয়নের চাঁদ গাজী, বক্তারহাট,মনুরহাট বাজারে প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে।
আরো জানা যায়, ফেনীর ছাগলনাইয়ার সীমান্তের অন্তত ৫০ পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অবাধে ফেনসিডিল, গাঁজা, বিদেশী মদ,ইয়াবা, শাডী,চিনি সহ নানান নিষিদ্ধ পন্য আনা হচ্ছে। উপজেলার অন্তত ২০০ জন চোরাকারবারি এর সাথে জডিত আছে। তারা সীমান্ত থেকে মাদকের পাশাপাশি চিনির ব্যাবসাকে প্রধান হিসেবে নিয়েছে, এসব ফেনীর মূল শহরেসহ এবং চট্টগ্রাম ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে নিরবে নিভৃতে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বিজিবি টহলসহ অন্যন্য প্রসাশনিক তৎপরতা না থাকায়, চোরাকারবারিরা চোরাচালানের ‘মূল পয়েন্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে এই জায়গাটি। কারণ এ রুটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলেরও ভয় থাকে না। এ সুযোগে ভারতীয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে ঢুকছে।
ছাগলনাইয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, এই থানার আমি আসার পর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ মাদক ও চোরাকারবারি আটক করেছি এবং আমার এই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকায় যেসব অপরাধ গুলোর দেখার দায়িত্ব বিজিবি সদস্যেদের। সরকারি কিছু নিয়মকানুন থাকার কারনে আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবেশ করতে পারিনা। ছাগলনাইয়া থানায় আগমনের পর থেকে বিজিবি কর্তৃক কয়টি মাদক অথবা চোরাচালান আপনি পেয়েছেন? এই জবাবে তিনি বলেন আমি গত সাত মাসে একটা ও পাইনি।
নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত একলায় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কোন চোরা চালান,মাদক, চিনি সহ যাবতীয় মালামাল সীমান্তে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেয়ার করুন:

Recommended For You