স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস আজ

কেবল সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশে নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে ১২ হাজার ৭৬৪ জন নারী আর মারা যায় ৭ হাজার ১৩৫ জন। শুধু দ্রুত শনাক্ত করতে না পারার কারণেই স্তন ক্যানসারে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্তন ক্যানসার নিজে নিজেই শনাক্ত করা যায়। আর প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৯০ শতাংশ স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, লজ্জা ও সচেতনতার অভাবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া খাদ্যাভ্যাস, বয়স, ওজনাধিক্য, দীর্ঘদিন ধরে হরমোনের ওষুধ খাওয়ার কারণেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণে নারীরা নিজেই বড় পরীক্ষক। প্রতিবার ঋতুস্রাবের তিন থেকে চার দিন পর নারীরা নিজ স্তন পরীক্ষা করে এ সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। কোনো সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলেই স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তারা বলেছেন, স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহার উদ্বেগজনক। তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করা সম্ভব হয়নি। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হলে এ রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে রোগী শনাক্তকরণে কমিউনিটি ক্লিনিককে সম্পৃক্ত করা, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে স্তন ক্যানসার শনাক্তের পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো এবং স্তন ক্যানসার নির্ণয় ও প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে জানান।

গ্লোবাল ক্যানসার স্ট্যাটিস্টিক্স ২০১৮ (গ্লোবোক্যান) এর তথ্যমতে, প্রতি বছর নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে ২০ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৯ জন নারী। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, এখন পুরুষদেরও সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। কারণ পুরুষদের মধ্যেও স্তন ক্যানসার দেখা দিচ্ছে। যদিও পুরুষদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম। এক হিসাবে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর ৪১ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার বিপরীতে মাত্র ৩০০ জন পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হন।

স্তন ক্যানসারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে আক্রান্তের হার ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১ লাখ ৪০ হাজার নতুন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৪১ হাজার নারী ক্যানসারের কারণে মারা যান।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জানান, বিআরসিএ-১ ও ২ নামের জিনের অস্বাভাবিক মিউটেশন স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী। আবার কারো মা, খালা, বড় বোন বা মেয়ের স্তন ক্যানসার থাকলেও ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই।

আজ ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সারা দেশে পালিত হবে ১১তম ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস-২০২৩’। ২০১৩ সালে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ শুরু করে সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম’। সেই বছর ১ অক্টোবর বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সমাজসেবীদের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বাংলাদেশে এই দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

কোভিড-১৯ অতিমারির সময়সহ গত ১০ বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফোরাম ও এর সদস্য সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এই দিবস পালন করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল কিংবা এলাকাভিত্তিক সচেতনতা আলোচনা, শোভাযাত্রা ও বাংলায় লেখা তথ্যসমৃদ্ধ লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ও সুরক্ষা, সূচনায় নির্ণয় ও স্ক্রিনিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এবার সারা দেশে এই দিবস পালিত হবে। গত বছরের মতো এ বছরও প্রতিবাদ্য ‘স্ক্রিনিং জীবন বাঁচায়’। সচেতনতার পাশাপাশি এখন নারীদের স্ক্রিনিংয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সকাল সাড়ে ৯টায় আইইডিসিআর (পুরাতন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংলগ্ন) নতুন মিলনায়তনে এ উপলক্ষে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১১টায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলা অভিমুখে ‘গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা’ উদ্বোধন করা হবে।

আলোচনা ও শোভাযাত্রা উদ্বোধনে অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী, ড. হালিদা হানুম আক্তার, প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব এ এফ এম সরওয়ার কামাল, বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন, ডা. বেনজীর আহমেদ, ডা. আবু জামিল ফয়সল এবং স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ অংশ নেবেন। স্তন ক্যানসার সচেতনতায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ১০ জন সাংবাদিককে কৃতজ্ঞতা স্মারক প্রদান করা হবে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You