
ডাক ও টেলিযোগাযোযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)কে গুণগত মানের ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদনের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে বিদ্যমান অবকাঠামো এবং ডিভাইস উৎপাদনের প্লান্টসমূহের আধুনিকায়নের পাশাপাশি স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার – ল্যাপটপ, সীমকার্ড, ব্যাটারি সেল (লিথিয়াম – আইওন) চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক, রাউটার এবং আইওটি ও রোবটিক্স ডিভাইস উৎপাদনে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর মিলনায়তনে টেশিস এর ভৌত অবকাঠামো আধুনিকায়ন, নতুন ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও সংযোজন প্লান্ট স্থাপন এবং বিদ্যমান প্লান্টসমূহের উৎপাদন –সংযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের সমন্বিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদন সংক্রান্ত টেশিস আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী টেলিফোন শিল্প সংস্থাকে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদনে সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী দিনে বইয়ের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের হাতে ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ দিতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের হাতে ল্যাপটপ পৌঁছে দিতে ২০১৫ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স বৈঠকে টেশিসকে শক্তিশালী করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে টেশিসকে পুরোপুরি প্রস্তুত করার কাজ আমরা শুরু করেছি। তিনি বলেন টেশিসকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই একমাত্র লক্ষ্য নয়, এর সাথে আবেগ জড়িয়ে আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
টেশিসকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমাকেই বলা হয়েছিল। এটা আমার আবেগের জায়গা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। শিক্ষার ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও টেলিফোন শিল্প সংস্থাকে লাগসই ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন ও সংযোগের জন্য নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তোলা যাবে না তা হতে দিতে পারি না। টেলিফোন শিল্প সংস্থা উৎপাদিত দোয়েল ল্যাপটপ ইতোমধ্যেই আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১১ সালে দোয়েল যাত্রা শুরু করার পর গুণগতমানের ঘাটতিসহ নানা কারণে দোয়েলকে অনেকটাই গ্রাহকের আস্থার জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সে অবস্থা এখন আর নাই।
টেশিস সে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে। আইসিটি বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরবরাহকৃত হাজার হাজার দোয়েল কম্পিউটার ও ল্যাপটপ অত্যন্ত গুণগত মানসম্পন্ন ডিভাইস নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদনের ওপর তার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তিনি টেশিসকে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্রীয় লাভজনক ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা ও তার প্রতিকারের উপায়সহ বিভিন্ন কারিগরি বিষয় চূড়ান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদনে স্পষ্ট করার পরামর্শ ব্যক্ত করেন। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতসহ কারিগরি বিভিন্ন বিষয় সন্নিবেশিত করে সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করার জন্য তিনি নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ, কে, এম, আমিরুল ইসলাম, জিনাত আরা ও মোহাম্মদ রেজাউল করিম, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম, সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আজম আলীসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনগণ উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল টেলিফোন শিল্প সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। এর আগে ১৯৬৭ সালে সরকার ও পশ্চিম জার্মানির মেসার্স সিমেন্স এজি এর যৌথ উদ্যোগে টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানটি জন্ম লাভ করে। এনালগ ও ম্যানুয়্যাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, টেলিফোন সেট ও টিন্ডটি সম্পৃক্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও উৎপাদন করা প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ ছিলো। ২০০৮ সালে সিমেন্স তার অংশ ছেড়ে দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির সকল শেয়ার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়।