সাভারে মিথ্যা প্রতিবেদনে দুই সাংবাদিককে ফাঁসানোর অভিযোগে মানববন্ধন

সাভারে সাংবাদিককে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশীটভুক্ত প্রধান আসামির দায়েরকৃত পাল্টা মামলায় ভিত্তিহীন প্রতিবেদন দাখিল করে দুই সাংবাদিককে ফাঁসানোর অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধন শেষে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিমুলতলা এলাকায় তিতাস কার্যালয়ের সামনে এ মাবববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শতাধিক মানুষ এতে অংশ নেন।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা বলেন, গত বছরের ১৪ই আগস্ট দৈনিক তৃতীয় মাত্রার সাভার প্রতিনিধি সোহেল রানাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পুলিশের চার্জশীটভুক্ত প্রধান আসামি সামিউল আলম শামীমের দায়েরকৃত পাল্টা মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে ভুক্তভোগী সাংবাদিকসহ তার সহকর্মী জাহিন সিংহকে। বক্তারা আরো বলেন, হত্যাচেষ্টার ঘটনা আড়াল করতে আসামির দায়েরকৃত মামলাটিতে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।। প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে বাদীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ প্রমাণের কথা বলা হলেও ঘটনার কোন আলামত, ঘটনাস্থল বা আশেপাশের কোন সিসিটিভির ফুটেজ কিংবা এর সপেক্ষে একটি প্রমাণও উল্লেখ্য করতে পারেনি। তবুও ঘটনার সাথে দুই সাংবাদিককে ফাঁসানোর চেষ্টা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যা ন্যায় বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাভার টেলিভিশন রিপোর্টার ইউনিটির সভাপতি ও নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভির প্রতিবেদক নাজমুল হুদা, সাভার প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন আলম, সাভার প্রেসক্লাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এমদাদুল হক, যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার মতিউর রহমান ভান্ডারী, আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, সাভার উপজেলা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি লোটন আচার্য্য, দেশ রূপান্তরের ওমর ফারুক, এখন টিভি ও কালবেলার হুমায়ূন কবির, নয়া দিগন্তের ইমরান হাসান নিলয়, এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার এলিও সরকার স্বপন, নিউ ন্যাশনের এস এম মনিরুল ইসলাম, ভোরের ডাকের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, দৈনিক ফুলকির সুজন হাসান, মিলিনিয়াম টিভির আনিস, দৈনিক সকালের সময়ের আহমেদ জীবন, গণকণ্ঠের শাহাদাত হোসেন, মুক্ত খবরের সেলিম রেজা, ভুক্তভোগী জাহিন সিংহ ও সাংবাদিক সোহেল রানা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ আগস্ট রাতে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় এক বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাটসহ নারীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শফিউল আলম সোহাগসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার পর সংবাদ প্রকাশের জেরে ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি ও অপপ্রচার করেন গ্রেপ্তার ইউপি সদস্যের ভাই সামিউল আলম শামীম ও তার অনুসারীরা। অপপ্রচারের প্রতিবাদে ১৩ই আগস্ট সকালে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা। অপপ্রচার ও হুমকির ঘটনায় সেদিন রাতেই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক সোহেল রানা।

তবে ঘটনার পরের দিন ১৪ই আগস্ট দুপুরেই সাংবাদিক সোহেল রানাকে সাভার উপজেলা পরিষদের ভিতর হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলেও অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানাস্তর করা হয়। এ ঘটনায় ১৫ ই আগস্ট হুমকিদাতা শামীমকে প্রধান আসামি করে ২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন হামলার শিকার সাংবাদিকের মামা আশরাফুল ইসলাম। হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকাকালেই সাংবাদিককে হত্যাচেষ্টার ঘটনা আড়াল করতে ১৭ই আগস্ট হামলার শিকার সোহেল রানা ও তার সহকর্মী জাহিন সিংহ’র বিরুদ্ধে আদালতে পাল্টা মামলা করেন হত্যাচেষ্টা মামলায় বর্তমানে পুলিশের চার্জশীটভুক্ত প্রধান আসামি সামিউল আলম শামীম। সাংবাদিক সোহেল রানাকে হত্যার চেষ্টা মামলায় শামীমসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেছেন আদালত।

শেয়ার করুন:

Recommended For You