উখিয়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

কক্সবাজারের উখিয়ায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় উখিয়ার পাঁচ ইউনিয়নে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ১৮৬।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং) কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৭১ জন ও ২৪ ঘন্টায় জেলায় ১০০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে উখিয়ায় ১২ জন।

উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন বলেন, সারাদেশের মতো উখিয়াতেও সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগীদের পরিক্ষা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিক্ষা কিট সংকট দেখা দিয়েছিল এবং প্রতদিন সিভিল সার্জন অফিস থেকে দফায় দফায় কিট নেওয়া হচ্ছে। জনগণের মাঝে ডেঙ্গু সচেতনতা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। উখিয়া হাসপাতাল ৩১ বেডের হাসপাতাল, প্রশাসনিক ৫০ শয্যা বিশিষ্ট অনুমোদন পেয়েছে। তবে ৫০ জনের স্থলে ভর্তি রাখা হয় ৬০ থেকে ৭০ জন।

কুতুপালং এলাকার জাহেদ হোছেন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শত শত ডেঙ্গু রোগী।স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝেও ছড়িয়ে পড়ছে।

পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকার রিয়াদ বলেন, তার এক নিকট আত্মীয়ের পরিবারে একসাথে ২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

গেলো ২৮ আগস্ট চিকিৎসকের অবহেলায় উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি এলাকার ইয়াসমিন আক্তার (৮)-এর মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন স্বজনেরা । তারা জানান, ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত লিজাকে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় তার পরিবার। পরে ডাক্তারের পরামর্শে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু টেস্ট করানো হয়। ডেঙ্গু পজিটিভ আসলে পুনরায় উখিয়া স্বাস্থ্য ভবনে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির ১ ঘন্টা পর রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসককে রোগী দেখার জন্য আসতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ডিউটিরত নার্সদের জানালে তারাও অপারগতা প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে অবহেলায় চিকিৎসার অভাবে রাত ১টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এই শিশু।

চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু ব্যাপারে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন বলেন, সরকারি হাসপাতালে সন্ধ্যার পর ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পরীক্ষা করার কোন সুযোগ থাকে না। তাই রোগীকে ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্যে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসলে আমাদের জন্য সহজ হতো। কিন্তু তারা আরও প্রায় ৪ ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে সময় কাটিয়ে আমাদের কাছে আসে। তখন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রেফার করার পরও তারা রোগী নিয়ে যায়নি। তাঁরা রিস্কবন্ড দিয়ে উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি রাখেন। পরে ১ ঘণ্টা সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চিকিৎসা করা হলেও রোগী মৃত্যুবরণ করেন। তখন স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে আমাদের হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সদের উপর হামলা করেন। তাৎক্ষণিক উখিয়া থানা পুলিশ স্টাফ নার্সদের রক্ষা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় আমরা অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও মর্মাহত।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার শাহ্ ফাহিম আহমাদ ফয়সাল বলেন, জেলার উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় এ পর্যন্ত সাড়ে ১ লাখ ৪৮ হাজার মশারি বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে ডেঙ্গু রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বিগত সময়ের চেয়ে এই বছর আরও বাড়তে পারে। তাই এখন থেকে যথাযথ প্রস্তুতি রাখতে হবে। আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যাও।

শেয়ার করুন:

Recommended For You