সৌদি থেকে ফিরে টিকটকার, আড়ালে ইয়াবার কারবার

সৌদিপ্রবাসী ইউনুছ সিকদার দেশে ফিরে টিকটক ভিডিও তৈরি শুরু করেন। এতে বেশ পরিচিতি ও জনপ্রিয়তাও পান। তাঁর ফলোয়ার (অনুসারী) তিন লাখের বেশি। টিকটক করেই তাঁর আয় মাসে প্রায় দুই লাখ টাকা। ভিডিওতে তিনি মাদকবিরোধী বক্তব্য দিয়ে সবাইকে নেশাদ্রব্য থেকে দূরে থাকতে বলেন। ধর্মের পথে থাকার পরামর্শও দেন। তবে এর আড়ালে তিনি চালাতেন ইয়াবার কারবার। সম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক অভিযানে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে তাঁর এমন কীর্তিকলাপ।

ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের জানান, নানা কৌশলে ইয়াবা বহন করতেন ইউনুছ। সর্বশেষ তিনি বিশেষ কৌশলে মোটরসাইকেলের চাকায় লুকিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছে ৩ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিস্তারিত জানিয়েছেন।

ডিএনসি সূত্র জানায়, নোয়াখালীর সেনবাগের লুধুয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইউনুছ। তিনি থাকেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বণিকপাড়া এলাকায়। একসময় তিনি সৌদি আরবে থাকতেন। করোনাকালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর টুকটাক ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন টিকটক ভিডিও তৈরি। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তিনি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেগুলো বহু মানুষ দেখেন এবং তাঁর ফলোয়ার হন। এ কারণে বিভিন্ন সময় তিনি অনুসারীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেন বা কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবেও যান। সেখানে তিনি ভালো মানুষ সেজে মাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। অথচ তিনি নিজেই করেন ইয়াবার কারবার। চতুর ও ভদ্রবেশী ইউনুছ এর আগে কখনও ধরা পড়েননি। আটকের পর তিনি দাবি করেন, এবারই প্রথম ইয়াবা এনেছেন। এগুলো পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি ৩০ হাজার টাকা পেতেন। অবশ্য তাঁর দাবির সঙ্গে একমত নন অভিযান-সংশ্লিষ্টরা। কর্মকর্তারা বলছেন, ইউনুছ নিজেই ইয়াবা কারবারি, বাহক নন। এর আগেও তিনি অনেকবার চালান এনেছেন। এই কারবারে তাঁর এক ভগ্নিপতির সম্পৃক্ত থাকার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।

ডিএনসি মিরপুর সার্কেলের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁঞা সাংবাদিকদের জানান, টিকটক ভিডিও তৈরি করে ইউনুছ নিজের পরিচিতি গড়ে সেটাকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। ইয়াবার কারবারে অল্প সময়ে অনেক টাকা পাওয়ার লোভে তিনি এ কারবারে জড়ান বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। গোয়েন্দা তথ্যে গত ২০ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় একটি ফাস্টফুডের দোকানের পাশে অবস্থান নেয় অভিযানকারী দল। বিকেল ৫টার দিকে ইয়াবার চালান হাতবদলের উদ্দেশ্যে ইউনুছ সেখানে উপস্থিত হলে তাঁকে আটক করা হয়। প্রথমে তল্লাশি করে তাঁর জিন্স প্যান্টের পকেটে পাওয়া যায় ১ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁর মোটরসাইকেলের চাকায় আরও ইয়াবা আছে। তখন একজন মিস্ত্রির সহযোগিতায় মোটরসাইকেলের সামনের চাকা খুলে ভেতরে কালো রঙের ফোম পাওয়া যায়। সেটির ভেতর লুকানো ছিল ছোট ছোট রঙিন বেলুনে মোড়ানো কিছু বস্তু। পরের ধাপে বেলুনের আবরণ সরিয়ে সুকৌশলে রাখা ইয়াবা বের করে আনা হয়। এখানে পাওয়া যায় আরও ২ হাজার পিস। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে।

টিকটক ভিডিও তৈরির আড়ালে মাদক কারবার অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে গত বছরের ২৭ অক্টোবর যশোরের মণিহার বাসস্ট্যান্ড থেকে দুই তরুণ-তরুণীকে আটক করে র‍্যাব। তখন র‌্যাব-৬ কর্মকর্তারা জানান, একটি চক্র টিকটক ভিডিও বানানোর আড়ালে কক্সবাজার থেকে যশোরে মাদকের চালান আনছিল। তাদের কাছে ২ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন:

Recommended For You