আজ বিশ্ব মশক দিবস : ডেঙ্গু আক্রান্ত ১ লাখ

বিগত এক দশক ধরে দেশে মশাজনিত রোগের ভয়াবহতা বেড়েই চলছে। চলতি বছর যা অতীতের সর্ব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে এডিস মশা সৃষ্ট ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ হাজার ৪৭৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে মোট ৪৬৬ জনের। অর্থাৎ দুই মাসে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৭ দশমিক ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি।

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে মশাজনিত ডেঙ্গু জ্বরে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মশক দিবস। স্বাস্থ্য-বিষয়ক ওয়েবসাইট অনুযায়ী, মশাবাহী ছয়টি রোগ হলো এনকেফালাইটিস, জিকা ভাইরাস, ডেঙ্গু জ্বর, পীতজ্বর, চিকনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়া। এর মধ্যে বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ার ভাইরাসবাহী মশার কামড়ে। বাংলাদেশেও পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে, তবে এতে মৃত্যু কমিয়ে আনা গেছে। তবে বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তবে আক্রান্তের হার বেশি ব্রাজিলে।

মূলত পৃথিবীর কর্কটক্রান্তীয় রেখা বরাবর অবস্থানে থাকা দেশগুলোর আবহাওয়াজনিত কারণে মশার উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মশাজনিত রোগের প্রকোপ বেশি। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অঞ্চলভিত্তিক রোগতত্ত্ব গবেষণা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় মশার কামড়ে সৃষ্ট রোগের। কারণ, সারাবছর অন্য যেকোনো রোগের থেকে এসব অঞ্চলে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। দেশে ম্যালেরিয়া ও চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব থাকলেও বর্ষায় এডিস মশার প্রজনন ও বিস্তার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলে এই সময় ডেঙ্গু আক্রান্তের হারও থাকে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে রাজধানীকেন্দ্রিক ডেঙ্গুর বিস্তুার ঘটলেও এ বছর তা ছড়িয়েছে সারা দেশে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ থাকলেও নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা, দুর্নীতি ও অনিয়মে ন্যূনতম সফলতা মিলছে না। ফলে এই রোগ থেকে বাঁচতে ব্যক্তির সর্তকতাই এখন একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শিশুদের আক্রান্তের ঝুুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে গত দুই মাসেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৮৫ হাজার এবং গত ১৮ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ হাজারেরও বেশি রোগী। দেখা গেছে, মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার জনের বয়স ১-১৫ বছর এবং ১০ বছরে নিচে শিশুর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ জন।

সারা বছরই দেশে মশাজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলেও এডিস মসার কারণে জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। দেখা গছে, গত মে মাসে এক হাজার রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুনে যা পাঁচ গুণ বেড়ে পাঁচ হাজার, জুলাইয়ে প্রায় আট গুণ বেড়ে ৪০ হাজার এবং আগস্টের মাত্র ১৯ দিনে ৪৬ হাজারের বেশি অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ গুণের বেশি বেড়েছে।

এদিকে ম্যালেরিয়া এবং এডিসজনিত রোগ নির্মূল করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডব্লিউএইচও প্রতিনিধি ডা. বরদান জং রানা বলেন, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৯টি দেশ রয়েছে, যেখানে ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশার প্রকোপ বেশি। এসব দেশে বছরে মোট আক্রান্তের ৯৬ ভাগই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের হার কমেছে। দেখা গেছে, আক্রান্তের ৯০ শতাংশই চট্টগ্রাম বিভাগের তিনটি পার্বত্য জেলার।

ডা. বারদান জানান, ডব্লিউএইচও জুলাই থেকে আগস্ট ২০২২-এ একটি যৌথ ম্যালেরিয়া পর্যবেক্ষণ মিশন পরিচালনা করে। এটা থেকে সফলতা এসেছিল। আশা করা যাচ্ছে, যৌথ মিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ২০২৪-২০৩০ সালের জন্য মশা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা/এনএসপি আপডেট করা হবে।’

এ সময় ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

শেয়ার করুন:

Recommended For You