ডেঙ্গু জ্বর : বিভ্রান্তি ও করণীয়

বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক আগে থেকে। প্রায় প্রতি বর্ষাতেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। এই শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা সবার নজরে আসে। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা, আর দ্রুত কিছু মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকে। শুরু হয় রক্ত ও প্লাটিলেট দেওয়া নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর এন্টিবডি পরীক্ষার হিড়িক।

তবে একদিকে চিকিৎসকদের যেমন অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার দক্ষতা বেড়েছে, তেমনি রোগী ও জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভীতিকর অবস্থারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় রক্ত সঞ্চালন ও প্লাটিলেটের ব্যবহার কমেছে। তবে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক ও ভুল ধারণা এখনো রয়ে গেছে, যা দূর করা দরকার।

ডেঙ্গু জ্বরে কি মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে? অনেকে এখনো মনে করেন, ডেঙ্গু জ্বর মানেই খুব মারাত্মক রোগ এবং ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রায়ই রোগী মারা যায়—এই ধারণা একেবারেই ভুল। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়। যদিও বলা হয়, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুহার ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে নিজ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এই হার ১ ভাগেরও কম। মৃত্যুঝুঁকি তাদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে, যারা অবহেলা করে সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

জ্বর কমে গেলে কি বিপদ কেটে গেল? ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো দুই বা তিন দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক চিকিৎসকও মনে করেন রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছু দিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়টাতেই সবারই সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্তত রক্তের সিবিসি ও প্লাটিলেট পরীক্ষা করা উচিত। কারণ, এখন ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি। মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ? ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে এক বিছানায় শোয়া, একসঙ্গে থাকা, খাওয়া বা রোগীর ব্যবহার্য কোনো জিনিস ব্যবহার করায় অন্যদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় কোনো বাধা নেই। এটা বাতাসে ছড়ায় না, শুধু ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে যে কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীকে অন্য কোনো মশা কামড়ালে তার মুখে ভাইরাসটি কিছুক্ষণ থাকে, যদি ঐ মশা সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায়, তাহলে ডেঙ্গু হতে পারে। এছাড়া অন্য কোন মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ায় না।

ডেঙ্গু জ্বরের সময় কি অপারেশন করানো যাবে? একেবারে অপরিহার্য না হলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় অপারেশন না করানোই ভালো। এতে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রক্তপাত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অনেক সময় রোগীর পেটে ব্যথা হতে পারে, যা অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলে শনাক্ত করে জরুরি অপারেশন করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এ সময় এই অপারেশন না করানোই ভালো।

ডেঙ্গু জ্বরে কী কী পরীক্ষা কখন করা উচিত? সাধারণত বেশি টেস্ট করার প্রয়োজন হয় না। সিবিসি ও প্লাটিলেট কাউন্ট করলেই যথেষ্ট। এক-দুই দিনের জ্বরে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং চার থেকে ছয় দিন পর এন্টিডেঙ্গু এন্টিবডি করা যেতে পারে। প্লাটিলেট কাউন্ট চার বা পাঁচ দিন পর কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর চার-পাঁচ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। আবার অনেকেই দিনে দু-তিন বার, এমনকি একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন, যা অপ্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে, প্লাটিলেট কাউন্ট চার বা পাঁচ দিন পর থেকে কমতে শুরু করে। তাই জ্বর শুরুর চার বা পাঁচ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এর আগে পরীক্ষা করলে তা স্বাভাবিক থাকে বিধায় রোগ নির্ণয়ে যেমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তেমনি অপ্রয়োজনে পয়সা নষ্ট হয়। দেখা যায়, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন রকমের রিপোর্ট আসছে, এতে কোন রিপোর্ট সঠিক তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিত্সক বা রোগী বিভ্রান্তিতে পড়ে। তাছাড়া এতে অযথা রোগীর অর্থের অপচয় ঘটে।

সব রোগীর ক্ষেত্রেই ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত, ডেঙ্গুতে সাময়িকভাবে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গুতে কিছু রুটিন পরীক্ষা করা হয়, যা অপরিহার্য নয় এবং সব ক্ষেত্রে করা হয় না, কিছু সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই করা উচিত। ডেঙ্গুতে সাধারণত লিভারের প্রদাহ হয়ে থাকে, যার কারণে রক্তে লিভারের পরীক্ষাগুলো স্বাভাবিক না-ও হতে পারে। যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি বাড়তে পারে। তাই ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়ে গেলে লিভারের জন্য এই পরীক্ষাগুলো বারবার করার কোনো দরকার নেই, রোগের চিকিত্সায়ও কোনো লাভ হয় না। এতেও অযথা অর্থের অপচয় ঘটে।

পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করা হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পেটে পানি (এসাইটিস) পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও রোগীর চিকিৎসার কোনো পরিবর্তন হবে না বা অতিরিক্ত কোনো ওষুধ দেওয়া লাগে না। তাই রুটিন হিসাবে পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করার কোনো দরকার নেই। বুকের এক্স-রে করলে দেখা যায়, প্রায়ই বুকের ডান দিকে পানি পাওয়া যেতে পারে। যদি রোগীর শ্বাসকষ্ট থাকে, তবে এক্স-রে করা যেতে পারে। তবে বুকে পানি জমলেও তা বের করার প্রয়োজন সাধারণত হয় না। ডেঙ্গুর চিকিৎসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।

রক্তের বিটি ও সিটি করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে চিকিৎসক যদি মনে করেন রোগী ডিআইসি-জাতীয় কমপ্লিকেশনে আক্রান্ত, তবে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি. ডাইমার. এফডিপি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন। যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত কারণে হয়, তাই রক্ত ও প্রস্রাবের কালচার রুটিন হিসেবে করার প্রয়োজন নেই। তবে যদি ক্লিনিক্যালি অন্য কোনো সংক্রামক রোগ হওয়ার শঙ্কা থাকে, তাহলেই এই পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে। মাথার সিটি স্ক্যান সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়, এমনকি প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকলেও।

ডেঙ্গু চিকিত্সায় বিভ্রান্তি : ডেঙ্গু যেহেতু ভাইরাসজনিত কারণে হয়, তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন—জ্বর হলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ এবং এর সঙ্গে প্রচুর পানি ও শরবতজাতীয় তরল খাবার খাওয়ানোই যথেষ্ট। খেতে না পারলে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইত্যাদি দিতে হবে। তবে বমি হলে বা একেবারেই খেতে না পারলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।

জ্বর বা ব্যথা কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট, এসপিরিন বা অন্য কোনো ব্যথানাশক ওষুধ কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না, এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ, এতে এন্টিবায়োটিকের কোনো ভূমিকা নেই। তবে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুর সঙ্গে অন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগও থাকতে পারে, যেমন টাইফয়েড ফিভার বা অন্য কোনো ইনফেকশন, যার জন্য এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে এন্টিবায়োটিক দিতে পারেন। অনেকে মনে করেন, ডেঙ্গুতে এন্টিবায়োটিক ক্ষতি করতে পারে এবং তা পরিহার করতে হবে, যা একটি ভুল ধারণা। ডেঙ্গুতে এন্টিবায়োটিক কোনো ক্ষতি করবে না। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হলে মাংসে ইনজেকশন দেওয়া যাবে না। এতে হিমাটোমা হতে পারে।

রক্ত কি দিতেই হবে? ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় রোগী ও চিকিৎসক উভয়েই রক্ত দেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। অথচ যদি রক্তক্ষরণ না হয় এবং রোগীর রক্তের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক থাকে, তবে রক্ত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে রক্ত দিলে লাভ তো হবেই না, বরং অন্য কমপ্লিকেশন এমনকি হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, রক্তের প্লাটিলেট কম হলেই অনেকে রক্ত দিয়ে বসে। এতে কোনো লাভ হবে না। মনে রাখতে হবে, শুধু কম প্লাটিলেট কাউন্টের জন্য রক্ত দেওয়া উচিত নয়।

প্লাটিলেট কি দিতেই হবে? ডেঙ্গু জ্বরের পাঁচ বা ছয় দিনে রোগের স্বাভাবিকতাতেই প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে থাকে, দুই বা তিন দিন পর তা আপনা-আপনি বাড়তে শুরু করে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই। অনেক সময় প্লাটিলেট কাউন্ট অল্প কমে গেলেই রোগী ও চিকিত্সক খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসক প্লাটিলেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেট দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় ও তাড়াহুড়ো করে প্লাটিলেট দেওয়ায় হেপাটাইটিস বি অথবা সি, এমনকি এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বারবার প্লাটিলেট দিলে রক্তে এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হতে পারে। তাই অপ্রয়োজনে প্লাটিলেট দিলে লাভ না হয়ে বরং ক্ষতি হতে পারে। কাজেই প্লাটিলেট দেওয়ার জন্য রোগী ও চিকিৎসকের অযথা ব্যতিব্যস্ত হওয়ার বা চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এছাড়া প্লাটিলেট রিচড প্লাজমা (পিআরপি), প্লাজমা, ডেক্সট্রান ইত্যাদি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই দেওয়া যাবে। যেমন—ডেঙ্গু শক সিনড্রোম, ডিআইসি। অযথা এগুলো না দেওয়াই ভালো। শিরাপথে এলবুমিন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ক্ষেত্রভেদে রক্তের এলবুমিনের মাত্রা বেশি কমে গেলে তা প্রয়োজন হতে পারে।

একবার ডেঙ্গু হলে আর কি হয় না? ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ভিন্ন সেরোটাইপ আছে, তাই চার বার ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটি সেরোটাইপ দ্বারা এক বার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভবিষ্যতে সেই সেরোটাইপ দ্বারা আর আক্রান্ত হয় না। কারণ শুধু সেই সেরোটাইপে রোগীর আজীবন প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে ওঠে। কিন্তু বাকি তিনটি প্রজাতি দ্বারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ঠিকই রয়ে যায়। তবে কেউ যদি পৃথকভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ দ্বারা জীবনে চার বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে বাকি জীবনে আর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।

গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু : এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ, মা ও শিশু উভয়ের জন্যই এ সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

ডেঙ্গুতে স্টেরয়েড ব্যবহার করা যাবে কি? প্রসঙ্গটি বিতর্কিত, তবে অনেকেই ব্যবহার করার বিপক্ষে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়, বিশেষ করে রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। ক্ষেত্রবিশেষে ডেক্সামিথাসন-জাতীয় স্টেরয়েড শিরাপথে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর পর দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যা মনে রাখা উচিত : ১. ডেঙ্গু কোনো মারাত্মক রোগ নয় এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। রোগী ও রোগীর লোকদের অভয় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২. ডেঙ্গু জ্বর নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, এমনকি কোনো চিকিৎসা না করলেও। তবে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই চলতে হবে, যাতে কোনো মারাত্মক জটিলতা না হয়। ৩. ডেঙ্গু রোগে কী কী করা দরকার তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, কী কী করা যাবে না, তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। যা যা করা যায়, তা প্রয়োজন অনুযায়ী করতে হবে, অতিরিক্ত করা উচিত হবে না। ৪. রক্ত বা প্লাটিলেট পরিসঞ্চালন অপরিহার্য—এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।

ডেঙ্গু মশা ও তার বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ—দুটিই আমাদের চারপাশে বিদ্যমান। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন। ডেঙ্গু আগেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরকে ভয় না পেয়ে এর সঙ্গে যুদ্ধ করেই এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধ করেই আমাদের চলতে হবে।

লেখক : প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You