নাব্যতা সংকটে ধুঁকছে ব্রহ্মপুত্র নদ

নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে। নৌ-চ্যানেল অনেক স্থানে বন্ধ হয়ে গেছে।এ কারণে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে নদী তীরের ঘাট আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে আয়-রোজগারও কমে গেছে মাঝি-মাল্লাসহ নদীর ওপর নির্ভরশীল নানা পেশার মানুষের। বর্ষার পানিতে ডুবে যায় চর, আর শীতের শুরু থেকে পানি কমার সাথে সাথে শত শত চর জেগে ওঠে ব্রহ্মপুত্রে।

নদীর তলদেশে পলিমাটি জমায় কমে গছে নদীর ধারণ ক্ষমতা। চরাঞ্চলের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বহনে ভোগান্তির শেষ নেই। গত দেড়মাস ধরে সৃষ্টি হয়েছে এমন অবস্থা। এসব উত্তরণের জন্য দায়িত্বশীলরা কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌ-পথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও নৌকার মাঝিসহ ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শীতের শুরু থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি কমার সাথে সাথে অনেক স্থানেই জেগে উঠেছে বালুচর। বন্ধ হয়ে গেছে নদীতীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অভ্যান্তরিন নৌ-রুটে কুড়িগ্রামের মোঘলবাসা, চিলমারী নৌ-বন্দর, উলিপুর ফকিরের হাট, কর্তিমারী, বলদমারা, ঘুঘুমারী, খেওয়ারচর, রাজীবপুর লডঘাট, মাহেনগঞ্জ, কোঁদালকাটি ও নয়ারচর নৌ-রুটে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ-যান নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে অনেক পথ ঘুরে। অধিকাংশ নৌ-পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পণ্য ও যাত্রী পারাপারে। অন্য পথে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা চলাচল করলেও বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রী ও মাঝিরা। তেল খরচ যেমন হচ্ছে অতিরিক্ত, তেমনি লাগছে বেশি সময়ও। লোকসানও গুনতে হচ্ছে চরাঞ্চলের ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষকে। দেড়মাস ধরে ব্রহ্মপুত্র ধুঁকছে নাব্যতা সংকটে।

নৌকার মাঝি সমেজ উদ্দিন বলন,রাজীবপুরের মোহনগঞ্জ, নয়াচর, কোদালকাটি থেকে চিলমারী ও উলিপুর ফকিরের হাট ঘাটে আসতে নৌকায় সময় লাগত দুই ঘন্টা। আর পানি কমে চর জাগায় এখন সময় লাগে চার ঘন্টা। এছাড়াও নদীর মধ্যে নৌকা আটকে গেলে তা নামাতে সারা দিন লেগে যায়। এতে যাত্রীরাও হয়রানির শিকার হন।

আরেক নৌকার মাঝি নিলচাঁন মেকার বলেন, রৌমারীর বলদমারা নৌকাঘাট থেকে উলিপুর ফকিরের হাট নৌকাঘাটে এক ঘন্টার মধ্যৈই পৌছাঁনো যেতো। এখন শীতে ঘনকুয়াশার কারণে ও নদীতে পানি না থাকায় অনেক মাঝি পথ হারিয়ে যান। এ জন্য ঘাটে পৌছাঁতে দ্বিগুণ সময় লেগে যায়।

রিপন মিয়া নামের এক যাত্রী জানান, কর্তিমারী নৌকাঘাট থেকে সকাল ১০টার মধ্যেই কুড়িগ্রাম কোর্টে পৌছাঁনো যেতো। ওইদিনই আদালতে হাজিরা দিয়ে আবারও বাড়ি ফিরে আসতাম। আর এখন সকালে বাড়ি থেকে বের হলেও নদীতে পানি না থাকায় কুড়িগ্রাম পৌছাঁতে ১২টা বেজে যায়। যার কারণে রৌমারী ও রাজীবপুর উপজলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

নৌপথে পাথর ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান,রাজীবপুর ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে যাওয়ায় ও নদের বুকে ছোট ছোট অসংখ্য চর জেগে ওঠেছে। ফলে উলিপুরের ফকিরের হাট, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম নৌকাঘাট থেকে পণ্যবাহী নৌকা রৌমারী নৌকাঘাটে নিয়ে আসা যায় না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। জরুরী নদী খনন করে নৌপথ সচল না করলে ব্যবসা ও যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যাবে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, নাব্যতা সংকটে নৌপথের দূরুত্ব বেড়েছে। খরচ ও সময়ও বেশি লাগে। আমরা সময়মতো হাটে পণ্য নিতে পারছি না। ব্যবসায়ীকভাবে খারাপ সময় যাচ্ছে।

রৌমারী ও রাজীবপুর লডঘাট ইজারাদার শফিউল আলমের ভাষ্যে, নাব্যতা সংকটের কারণে তাঁদের আয় অনেক কমে গেছে। নদে পানি কমে অনক স্থানেই চর জেগে উঠেছে। এতে উলিপুর উপজলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজলার সাথে চিলমারী, ফকিরের হাট, কুড়িগ্রাম ঘাটে নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নাব্যতা সংকট দূর করতে নৌপথ ড্রজিং করে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ছোট ছোট চর জেগে উঠেছে। এতে করে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ এর চিলমারী নদীবন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, চার দিন ধরে চিলমারী পয়েন্টে খনন কাজ চলছে। তবে অন্য পয়েন্টগুলাতে পর্যায়ক্রমে খনন কাজ করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

ডব্লিউজি/এমআর/সুজন

Recommended For You