ভারতে আইসিসিআর স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চান যারা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে আইসিসিআর সুবর্ণ জয়ন্তী স্কলারশিপ পেয়ে ভারতের কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন আখিঁ রানী দাস তিতলি। তিতলি মূলত হিউম্যান রাইটস অ্যাণ্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স করার সুযোগ পেয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশের জন্য একটি বৃত্তি বা স্কলারশিপের ঘোষণা করেছিলেন এই স্কলারশিপটিই সুবর্ণ জয়ন্তী স্কলারশিপ।

আসুন জেনে আসা যাক আইসিসিআর স্কলারশিপ সম্পর্কে: আইসিসিআর (ICCR) একটি কালচারাল সংঘটন এর নামের পুরো মিনিং হচ্ছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (Indian Council for Cultural Relations)। ১৯৫০ সালে ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আইসিসিআর( ICCR )প্রতিষ্ঠা করেন।এরা প্রতিবছর ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতে পড়তে যাওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কিছু সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফুল স্কলারশিপ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে থাকে।

নির্ধারিত আসন সংখ্যা-
আইসিসিআর বিশ্বব্যাপী সাধারণত ৭৩টি দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২০০ জন শিক্ষার্থীর এই স্কলারশিপ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়, ২০০ টি সিটের এর মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ১৪০টি, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪০টি ও এমফিল/পিএইচডি পর্যায়ে ২০টি সিট বিদ্যমান।বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এই সংখ্যা ৫০০ ছিলো।ভারত সরকার প্রদত্ত এই স্কলারশিপ পাওয়া গেলে ভারতের নামকরা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ বিনা ব্যয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। এই স্কলারশিপে এ বছরে (২০২২ সালে) মোট ১০০০ টি আসন ছিলো। যার মধ্যে ICCR স্কলারশিপের জন্য ৫০০ টি এবং ITEC স্কলারশিপের জন্য ৫০০ টি আসন। এই স্কলারশিপের আওতায় অনার্স, মাস্টার্স, পিএইচডি কোর্সে আবেদন করা যাবে। এছাড়া সাইন্স, আর্টস, কমার্স, সোশ্যাল সাইন্স সহ অনেক সাবজেক্টের পড়ুয়ারা এই স্কলারশিপের সুবিধা পেয়ে যাবে।তবে আইসিসিআর কোনো মেডিকেল সায়েন্সে স্কলারশিপ প্রদান করে না।

  • এই স্কলারশিপ থেকে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
  • এই স্কলারশিপ থেকে শিক্ষার্থীরা মাসিক স্টাইপেন্ড পেয়ে যাবে। কোর্স অনুযায়ী স্টুডেন্টরা প্রতিমাসে সাধারণত নিম্নলিখিত স্টাইপেন্ড পেয়ে থাকে-
  • স্নাতক-১৮,০০০ রুপি, স্নাতকোত্তর-২০,০০০ রুপি,পিএইচডি-২২,০০০ রুপি,পোস্ট ডক্টরেট ২৫,০০০ রুপি।
  • এই স্কলারশিপ করা থাকলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিতে হবে না।
  • বিভিন্ন রকম গ্র্যান্ড এবং অ্যাকোমোডেশন এর সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • এই স্কলারশিপের আবেদন করার জন্য কোনোরকম আবেদন ফি লাগবে না।

এবার জানা যাক এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন-

  • HSC এর পর অনার্সে ভর্তি হওয়ার সময় SSC ও HSC তে কমপক্ষে ৬০% নম্বর বা GPA পেয়ে থাকতে হবে ।
  • অনার্স কমপ্লিট করে মাস্টার্সে আবেদন করার জন্য অনার্সে কমপক্ষে ২.৫ পেতে হবে।
  • মাস্টার্স কমপ্লিট করে পিএইচডি করার সময়েও মাস্টার্সে ভালো গ্রেড পেয়ে থাকতে হবে।
  • তবে নিয়মের পরিবর্তন স্বাপেক্ষে আবেদন যোগ্যতা ভিন্ন হতে পারে।

টোফেল-আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক নয়
শিক্ষার্থীরা তাঁদের টোফেল-আইইএলটিএস স্কোরও আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে পারে তাই ইংরেজির দক্ষতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও এসব কোর্সের জন্য টোফেল-আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক নয়। এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?

(১) পাসপোর্ট।

(২) সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট।

(৩) পাসপোর্ট সাইজের ফটো।

(৪) রেফারেন্স লেটার।

(৫) শিক্ষার্থীর সিগনেচার।
(৬) ৫০০ শব্দের মধ্যে একটি essay লিখে আপলোড করতে হবে। এটি গুগল বা অন্য কোথাও থেকে কপি করা যাবে না। মূলত শিক্ষার ইংলিশ স্কিল বা দক্ষতা যাচাই করার জন্য এই পদক্ষেপ।

(৭) মেডিকেল ফিটনেস ফর্ম। আইসিসিআর পোর্টালে এ ফর্ম দেয়া থাকে। ডাউনলোড করে ডাক্তারের কাছ থেকে পূরণ করে স্ক্যান করে জমা দিতে হবে।
(৮)আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ১৮-৩০ বছরের মধ্যে।

আবেদন পদ্ধতি-

আইসিসিআর প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফরম ছাড়ে।এই স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য সবার প্রথমে অফিশিয়াল ওয়েবসাইট http://a2ascholarships.iccr.gov.in/ এ যেতে হবে।  তারপর রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। রেজিষ্ট্রেশন হয়ে গেলে সমস্ত তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করে আবেদনকারী আবেদন করতে পারবেন। আবেদন গৃহীত হলে আপনাকে যথাক্রমে লিখিত পরীক্ষা English Proficiency Test (EPT) এবং পরবর্তীতে টপারদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। ভাইভাতে টেকার পরই ইন্ডিয়ান হাইকমিশন অফার লেটার পাঠায়। অফার লেটার পাওয়ার পরপরই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমার পঠিত বিষয়-

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কবির নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৬২ সালের ৮ মে প্রতিষ্ঠিত হয়।কলা , চারুকলা এবং দৃশ্যকলা তিনটি মূল অনুষদের মধ্য দিয়ে মোট ২৯ টি বিষয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়।এছাড়া একটি B.Ed অনুষদ রয়েছে। কলা বিভাগের মধ্য দিয়ে বাংলা , সংস্কৃত , হিন্দি , ইংরেজির মতো প্রথাগত বিষয় ছাড়াও তুলনামূলক সাহিত্য , অর্থনীতি , গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান , রাষ্ট্রবিজ্ঞান , মানব অধিকার ও মানব উন্নয়ন অধ্যয়ন-এর মতো বিষয় পড়ানো হয়।চারুকলা বিভাগে সংগীতবিদ্যা, নৃত্য , নাটক , যন্ত্রসংগীত, গণযোগাযোগ ও ভিডিওগ্রাফি-র মতো বিষয় পড়ানো হয় এবং দৃশ্য কলা বিভাগে ফলিত শিল্প, গ্রাফিক্স, পেইন্টিং, ভাস্কর্য, প্রদর্শনশালাসংক্রান্ত বিদ্যা-র মতো বিষয় পড়ানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদের অধীনে মানব অধিকার ও মানব উন্নয়নের শুধু মাস্টার্স কোর্সটি এখানে চালু করা হয়।২ বছরের এই মাস্টার্স প্রোগ্রামে চার সেমিস্টারে সর্বমোট ১০০ ক্রেডিট এবং ২৮টি সিট বিদ্যমান।

২০১৬ সালে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল National Assessment of Accreditation Council (NAAC) দ্বারা রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় “এ” গ্রেড প্রাপ্ত হয়েছে। ২০২২ সালের ইডু রেঙ্ক অনুযায়ী রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে ২০৮৯ তম, এশিয়ায় ৫০৯তম এবং ভারতে ৫৩তম প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী বা এলামনাই দ্বারা।উইকি পৃষ্ঠাগুলির জনপ্রিয়তা অনুসারে প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলামনাই বলতে হলে নৃত্য শিল্পী ডা. মেথিল দেবিকা,নীনা প্রসাদ,চিত্রেশ দাস,বেনজির সালাম, গায়ক মধুশ্রী, অজয় চক্রবর্তী, চিত্রশিল্পী শুভপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, অভিনেতা ও মূকাভিনয় শিল্পী নিরন্জন গোস্বামী, লেখক ও কবি মনিরুদ্দিন খান, ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ ডা. সৌমিত্র শেখর দে অন্যতম।

প্রতি বছরই আইসিসিআর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি দেয়। শুধু যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তা নয়। ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক ও নানা আকর্ষণীয় জায়গায় ভ্রমণের সুযোগ পান বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। ভারতের নানা জনপদ, বিভিন্ন এলাকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ ভাবনা ও লোকসংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দারুণ সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী এই বৃত্তির জন্য আবেদন করেন। একটু পরিকল্পনা করে বৃত্তির আবেদন করলে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন আছে যাঁদের, তাঁদের জন্য ভারত দারুণ এক গন্তব্য হতে পারে।

শিক্ষার্থী, ( আইসিসিআর স্কলার ), হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা

Recommended For You