১১ দফা মেনে নেওয়ায় হলে ফিরছেন খুবি ছাত্রীরা

প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভের পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আবাসিক হলের ছাত্রীদের ১১ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার (১৭ আগস্ট) সকালে খুবির অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা নুসরাত রিম্মি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দিনগত রাত ২টার দিকে ১১ দফা দাবি সংবলিত নোটিশে হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রাধ্যক্ষ বডির সব সদস্য সই করেন। এ সময় ছাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন অপরাজিতা হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ মাহফুজা খাতুন। এরপর রাত ২টা ৮ মিনিটের দিকে ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে ছেড়ে হলে ফিরে যান।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) অপরাজিতা হলের এক ছাত্রী বটি দিয়ে নিজের গলা কাটার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ছাত্রীদের রান্না করার সরঞ্জাম জব্দ করার নির্দেশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রাইস কুকার, হিটার এগুলো সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় ছাত্রীদের হলের সিট বাতিলের হুঁশিয়ারি দেয় প্রশাসন।

শিক্ষার্থীরা জানান, কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট ধরে ধমকানো ও শাসানো হয়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬) রাত ১০টার কিছু সময় পরে হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন অপরাজিতা হলের আবাসিক ছাত্রীরা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের ছাত্রীরাও। দুটি আবাসিক হলের ছাত্রীরা প্রথমে অপরাজিতা হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বিক্ষোভ শুরুর প্রায় দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসেন অপরাজিতা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রহিমা নুসরাত রিম্মি। তিনি ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন ও দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেন। তবে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভের পর রাত ২টা ৮ মিনিটের দিকে ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের হাদী চত্বরে ছেড়ে হলে ফিরে যান।

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো-

১. যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলার ঘটনায় ক্ষমা চাইতে হবে। ২. রাইস কুকার ও রান্নার সরঞ্জাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ৩. পানির পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। ৪. হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও নারী আত্মীয়দের থাকার অনুমতি দিতে হবে। ৫. হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ৬. প্রাধ্যক্ষ তার নিজ ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও অ্যাকাডেমিক বিষয়ে হয়রানি করেন। এটা বন্ধ করতে হবে ও ক্ষমা চাইতে হবে। ৭. ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। ৮. যে কোনো পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ৯. হলের মিল খাওয়া বাধ্যতামূলক থাকবে না। ১০. আজকের আন্দোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো ছাত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেওয়া যাবে না। ১১. দাবিগুলো দ্রুত না মানলে প্রাধ্যক্ষ কমিটির পদত্যাগ করতে হবে।

এ বিষয়ে খুবির অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা নুসরাত রিম্মি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তাদের সব দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ আমরা চাই না আমাদের সন্তানরা একটুও কষ্ট পাক আমাদের দ্বারা। তাদের হল তারা যেভাবে চাইবে, আমরা সেভাবে চালাব। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না এবং আমরা বিশ্বাসও করি না। তাদের সমস্যা আমরা সবসময় সমাধানের চেষ্টা করেছি।

ডব্লিউজি/এএইচ

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *