লিচুর রাজ্য’ খ্যাত ঠাকুরগাঁওয়ে লিচু বাগানের গাছগুলোতে মুকুল আসতে শুরু করেছে। গতবছর নতুন পাতা বেশি ও মুকুল কম এলেও এবার মুকুল বেশি দেখা যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লিচু বাগানে মুকুল শোভা পেতে দেখা গেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সব গাছে এখনো মুকুল আসা শুরু হয়নি। সবেমাত্র কিছু গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। তবে লিচু উৎপাদন নিয়ে এবার সংশয় নেই বলছেন লিচু চাষি ও বিশেষজ্ঞরা।
লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয় ঠাকুরগাঁওয়ে রসালো লিচু। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় প্রতিবছরই জেলাতে লিচু চাষ বাড়ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতবছর ঠাকুরগাঁও জেলায় পাঁচ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়। তবে এবার এখন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ৭০৫ হেক্টার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের থেকে সাংবাদিক কে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার লিচুর ফলন ভালো পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এবার বৃষ্টিপাত নেই। তবে বেশ শীত ছিল। শীত লিচুর মুকুলে কোনো প্রভাব ফেলে না।
এবার লিচুর মুকুল আসা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন মৌ পালন ও মধু উৎপাদনকারী রাকিব হাসান। তিনি সাংবাদিক কে বলেন, গতবছর বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ভিদের শাখার অগ্রভাগে কার্বনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় নতুন পাতা বেশি দেখা দিয়েছিল। প্রতিটি বাগানে কমবেশি গাছ নতুন পাতায় ছেয়ে গিয়েছিল। এবার নতুন পাতার পরিমাণ খুবই কম। এবার সঠিক সময়ে লিচুর মুকুল আসতে শুরু করেছে। আশা করছি এবার বোম্বাই লিচুর উৎপাদন বেড়ে যাবে।
রাকিব হাসান বলেন, ‘আমি অনেক বাগানে ঘুরেছি। প্রায় বাগানে লিচুগাছে মুকুল দেখতে পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ লিচুর গাছে মুকুল এসেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ গাছে মুকুল চলে আসবে।’
ঠাকুরগাঁও সদর বাড়ি গ্রামের লিচু চাষি আব্দুর রহমান সাংবাদিক কে বলেন, এবার লিচুর মুকুল অন্যান্যবারের তুলনা ভালো দেখা যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারাও আমাদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, হাড়িয়া, বেদেনা, কাঁঠালি উল্লেখয্যেগ্য। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বোম্বাই লিচু।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও প্রতিটি বাড়ির বসতভিটায় বা আঙিনায় লিচুগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে।
চাষিরা জানান, ফুল আসা থেকে ফল আহরণ করা পর্যন্ত তিন থেকে চারমাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কর্মব্যস্ত বেড়ে যায়। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পরে সেচ দিতে হয়। এছাড়া মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দিতে হয়। এখন সেচ দিতে শুরু করেছেন বাগানমালিকরা।
ঠাকুরগাঁওয়ে যেসব স্থানে লিচু চাষ হয় তার মধ্যে সদর, বড় বাড়ি,মুন্সির হাট, শিবগঞ্জ, ভাউলার হাট,আকচা,ফারাবাড়ি, উপজেলায় পীরগঞ্জ বিখ্যাত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের থেকে সাংবাদিক কে বলেন, সবেমাত্র মুকুল আসা শুরু হয়েছে। তাই কতটুকু মুকুল আসবে আর কী পরিমাণ লিচু উৎপাদন হবে তা বলার সময় আসেনি। তবে মুকুলের অনেক সমারোহ দেখা যাচ্ছে। ফলন ভালো হবে আশা করতে পারি।
ডব্লিউজি/এমআর/আব্দুল