
ফেনী প্রতিনিধি : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ছবি – সংগৃহীত,
ফেনী শহরে সরকারি জায়গায় দখল করে গড়ে তোলা পলাতক আওয়ামীলীগ নেতা মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের ভবন রক্ষায় পৌর কর্তৃপক্ষ কারসাজি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভা ড্রেন নির্মান কাজ শুরু করলেও ইতিমধ্যে ওই ভবনের জন্য শহরের পানি নিষ্কাশনে জনগুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়ন প্রকল্পটি থমকে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কোভিড প্রকল্পের আওতায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ ড্রেনগুলো নির্মাণ কাজ শুরু করে ফেনী পৌরসভা। এজন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল। নানা মহলের চেষ্টা-তদবীরে ট্রাংক রোডের পশ্চিম পাশে কাজটি থমকে ছিলো। গত ক’দিন আগে রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ের সামনে থেকে কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকার লতিফ টাওয়ার সংলগ্ন নির্মিতব্য জমজম টাওয়ার পর্যন্ত ৪ ফুট চওড়া বিশিষ্ট ৪৩০ মিটার ড্রেন নির্মান কাজ শুরু হয়। প্রায় ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্যা নিউ ট্রেড লিংক। কাজের শুরু থেকে সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দখল হওয়া দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলা হয়। ড্রেন নির্মান কাজটি পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস সড়কের পাশে পৌঁছলে একটি মহল পুনরায় জোর লবিং শুরু করে।
জানা গেছে, চব্বিশের ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর মহিপাল গণহত্যা মামলার আসামী ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল পালিয়ে যায়। পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস সড়কের মাথায় সরকারী দখলীয় জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা তার ৫ তলা ভবন রয়েছে। সেটি রক্ষায় সোহেল চৌধুরীর পক্ষে কতিপয় ব্যক্তি প্রতিনিয়ত পৌরসভায় তদবীর করছে। এদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক, আইনজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ডব্লিউ জি নিউজ সর্বশেষ জানতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
পৌরসভা সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের সময় তৈরি পূর্বের মাস্টার প্ল্যান কিছুটা রদবদল করে আরেকটা প্ল্যান করা হয়। সেই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু হলেও অদৃশ্য ইশারায় প্ল্যানের তোয়াক্কা না করে কাজ করার চেষ্টা চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়রা আরো জানান, ড্রেন নির্মানে এখানে কোথাও রাস্তার পাশে দোকান ভেঙ্গে সরকারের খাস জমি, সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল মুক্ত করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও কাউকে সুবিধা দেয়ার জন্য দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ড্রেনকে আঁকাবাঁকা করে নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষ করে সাবেক মুক্ত বাজার থেকে মিজান রোড পর্যন্ত ড্রেন বাঁকিয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। অথচ মিজান রোডের মাথা থেকে উত্তর দিকে বহু দোকান ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এভাবে আঁকাবাঁকা করায় ভবিষ্যতে নির্মানাধীন ড্রেনটি সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। ফলে পরিকল্পিত কাজ না করায় পানি ও ময়লা নিস্কাশনে বাঁধাগ্রস্থ হয়ে জনদূর্ভোগ আরো বেড়ে যাওয়ার শংকা রয়েছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, একসময় বলা হতো অমুক-তমুক রাঘববোয়ালদের হস্তক্ষপে সঠিকভাবে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করা যেতো না, এখন কার ভয়ে কাকে সুবিধা দেয়ার জন্য অথবা কোন সুবিধার বিনিময়ে ফেনী পৌরসভা ড্রেনের এই হাল করছেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির উদ্দিন বলেন, ‘‘কয়েকজন সাংবাদিক আমাদের কাজে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের কারণে কাজ স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছেনা। এ ব্যাপারে একটি মামলাও হাইকোর্টে আছে। পৌর প্রশাসক তাদেরকে তিনদিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। এই তিনদিনের মধ্যে আমাদেরকে কোর্টের রায় এনে দিবেন। নতুবা আমরা আমাদের মত কাজ করে ফেলবো। না হয় প্রকল্পের টাকা ফেরত চলে যাবে।’’
এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক গোলাম মো: বাতেন বলেন, ‘‘আমরা তো কাজ করতে চাই এবং সঠিকভাবে করতে চাই। কাজ করতে গেলে নানামুখী বাধার সম্মুখীন হই। এবার বড় বাধার সম্মুখীন হচ্ছি সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের কয়েকজন বারবার তদবীর করে আমাদেরকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। আমরা যেন কিছু লোককে বিশেষ সুবিধা দিই। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে প্ল্যান রদবদল করে ড্রেন বাঁকা করছি।’’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রকল্পটি যেহেতু পৌরসভার আপনারা পৌরসভার প্রশাসককে এসব প্রশ্ন করুন।’’ সেখানে সরকারি খাস জায়গা কতটুকু তা মেপে সল্পসময়ের মধ্যে বের করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, ‘‘রাস্তার পশ্চিম পাশে সড়ক ও জনপদের জায়গা এবং জেলা প্রশাসনের খাস জায়গা রয়েছে। এগুলোর স্থায়ী ও অস্থায়ী কোন বন্দোবস্ত নেই। এমনকি একসনা বন্দোবস্তও নেই। কেউ কেউ এক বছরের একটা অনুমতি নিয়েছেন। সেটা বছর বছর নবায়ন করার নিয়ম থাকলেও অনেক বছর যাবত কোন নবায়ন তারা করেননি। এরই মধ্যে তাদের কেউ কেউ প্রতি শতক ৬০-৭০ লাখ টাকা দরে বিক্রিও করেছেন। সেসব বিক্রিত জমিতে বিগত সরকার আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বহুতলা ভবনও তৈরি হয়ে গেছে। যারা নিজেরাই মালিক নন তারা কিভাবে বিক্রি করেন?”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বলেছি আপনার জায়গা অর্থাৎ সরকারের খাস জায়গা এবং সড়ক ও জনপদের জায়গা বের করে চিহ্নিত করেন। তারপর যা খুশি করেন।”
ডব্লিউ জি নিউজ ডেস্ক