চসিকের অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটা যাবে না :- মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি – সংগৃহীত,

ওয়াসার ঠিকাদাররা অনুমতি ছাড়া রাস্তা কেটে জনভোগাান্তি সৃষ্টি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। 

রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে চসিকের বিভাগীয় সমন্বয় সভায় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মেয়র ওয়াসার কারণে সৃষ্ট নগরীর দুর্ভোগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ওয়াসা সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা কাটছে। এতে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ নষ্ট হচ্ছে এবং জনগণের কষ্ট বাড়ছে। কোন সড়ক টেন্ডারের আওতায় আছে বা নতুন করে নির্মাণ হবে, তার তালিকা আমরা দেব। সেই সড়কগুলোতে কোনোভাবেই কাটাকাটি করা যাবে না। অনুমতি ছাড়া রাস্তা কাটলে চসিক তা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেবে। সড়কে খনন করলে ওয়াসাকে প্রতিটি সড়ক হস্তান্তরের আগে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে হবে—কোথায় কত ক্ষতি হয়েছে এবং সংস্কারে আসল খরচ কত লাগবে। অন্যথায় একতরফাভাবে দায়ভার নেবে না চসিক।

মেয়র আরো বলেন, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজের কারণে নগরীতে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, তা আমরাও লক্ষ্য করছি। ওয়াসার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, তারা ৯৩ কিলোমিটার সড়ক কেটেছে এবং এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার সড়ক খননেনর পর সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করেছে। এজন্য সংস্কারের ব্যয় বাবদ চসিককে ৮২ কোটি টাকাও দেওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন সংস্কার করছে না। কিন্তু তারা যে পরিমাণ টাকা দিয়েছে তার ২ থেকে ৩ গুণ খরচ করে সিটি কর্পোরেশন থেকে সড়ক সংস্কারে কাজ করতে হয়। অনেক জায়গায় আমরা নতুন রাস্তা শেষ করার পরই ওয়াসা আবার সেখানে খনন কাজ শুরু করেছে। এতে জনগণের কষ্ট বাড়ছে, আর কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ নষ্ট হচ্ছে।

প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ভাঙা রাস্তা ও গর্তগুলো দ্রুত প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে। চলমান উন্নয়নকাজও দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন তিনি। সেইসাথে প্রতিটি রাস্তার সঙ্গে কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন, যাতে জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব আবারও বেড়েছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিক পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মেডিকেল অফিসার ও প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক ও চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হবে। 

সভায় ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় নতুন একটি ঔষধ বিটিআই অনুমোদন পেলে মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।

রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর রাজস্ব বিভাগকে উদ্দেশ্য করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে যারা ব্যবসা করবে তাদের অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। কোনো অজুহাতে ছাড় দেওয়া হবে না। যেখানে চট্টগ্রাম নগরীতে ৪ থেকে ৫ লক্ষ ট্রেড লাইসেন্স থাকার কথা, সেখানে বর্তমানে আছে মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজারের মতো। 

মেয়র আরও বলেন, বাইরে থেকে দৃশ্যমান প্রতিটি সাইনবোর্ডের জন্য নির্ধারিত কর পরিশোধ করতে হবে। একইভাবে বড় বড় ডিফল্টাররা বছরের পর বছর হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সাধারণ মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয়, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দেন মেয়র। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জন্মসনদ বা অন্যান্য সেবার সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্সকে জড়িয়ে দেওয়া যাবে না। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনে ‘রাজস্ব সপ্তাহ’ চালু করা হবে। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবসায়ীরা কর পরিশোধ করবেন। তবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে।

তিনি জানান, শীঘ্রই চট্টগ্রাম বাসীর জন্য ‘আমার চট্টগ্রাম’ নামে একটি অ্যাপস চালু করা হবে। এই অ্যাপস মাধ্যমে নাগরিকরা যেকোন সময় কোথায় ময়লা পড়ে আছে ছবি তুলে ময়লার অবস্থান জানাতে পারবেন। এতে করে আমাদেরও পরিস্কার কার্যক্রম সচল রাখতে সুবিধা হবে। একইসাথে কোথায় সড়ক গর্ত আছে, কোথায় কি সমস্যা রয়েছে তা ছবি তুলে সাথে সাথে আমাদের মাঝে পাঠাতে পারবেন।

মেয়র আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের চসিকের রাজস্ব আদায় ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম তদারকিতে আরো তৎপর হওয়ার আহবান জানান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মো. ইমাম হোসেন রানা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী, প্রণয় চাকমা, মৌমিতা দাশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা, মো: জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারজানা মুক্তা, আশিকুল ইসলাম, আনোয়ার জাহান, রিফাতুল করিম, তাসমিয়া তাহসিন, নাসির উদ্দিন রিফাত, মাহমুদ শাফকাত আমিন, শাফকাত বিন আমিন, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মোঃ শরফুল ইসলাম মাহি, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মাসহ কর্মচারীবৃন্দ।

ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি II ডব্লিউ জি নিউজ

Recommended For You

About the Author: Shafiul Islam