বৈষম্য নিরসন না হওয়া পর্যন্ত দাবি আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যাবো- আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমাবেশে বক্তারা

ঢাকা: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি – সংগৃহীত,

গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখ ছিলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কনভেনশন হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কর্মরত ও প্রাক্তন সদস্যদের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সংবিধান সংস্কার কমিটির সাবেক সদস্য ফিরোজ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রববানি, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইলিয়াছ মাতাব্বর। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ২৫ ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এর আহ্বায়ক কৃষিবিদ ইকবাল আহম্মেদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ও আতিয়া সুলতানা। মূল প্রবন্ধে স্মৃতিচারণ হিসেবে ১৯৮০ সালের ২ সেপ্টেম্বরের বিভিন্ন পত্রিকার খবর তুলে ধরা হয়, যেখানে শিরোনাম ছিলো – “Colonial structure goes”, “No elitist privileges for any BCS cadre”, “Unified Civil Service Introduced” প্রভৃতি। অথচ, এখনো একটি ক্যাডার নিজেদেরকে সেই ব্রিটিশ কলোনিসটদের উত্তরাধিকারী দাবি করে নিজেদের এলিটিস্ট মনোভাব বজায় রেখে চলছে।

এ সময় বক্তারা বলেন, ১৪ টি মূল ক্যাডার ও ১৪ টি সাব ক্যাডারসহ মোট ২৮ টি ক্যাডার সমন্বিত করে একটি পেশাদার, আদর্শমুখী ও একিভূত সিভিল সার্ভিস গঠন করা হয়েছিলো। গতানুগতিকতাকে বাদ দিয়ে সুস্থ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির মাধ্যমে গুণগত মানের বিচারে সিভিল সার্ভিসের সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ হিসেবে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল। সর্বস্তরের মেধাবি কর্মকর্তারা যাতে সরকার পরিচালনায় ভূমিকা রেখে দেশের উন্নয়নকে গতিশীল করতে পারে – এটা ছিল উদ্দেশ্য।

তারা উল্লেখ করেন, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৮০, সিভিল সার্ভিস গঠনের দিন তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব:) মাজেদুল হক বলেছিলেন, “৮০’র ১ সেপ্টেম্বর জাতির ইতিহাসে স্মরণীয় দিন। উপমহাদেশে তো নয়ই, কমনওয়েলথভুক্ত দেশের মধ্যে আমরাই প্রথম প্রত্যেকের দক্ষতার উপর যথাযোগ্য মর্যাদা লাভের সমানাধিকার নিশ্চিত করেছি।” অথচ, বিগত ৪৫ বছরেও কোন সরকার সকল সার্ভিসের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করেনি। মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনের কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শিক দল ১৯৯১-১৯৯৬ শাসনামলে জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিলেও একটি ক্যাডারের চাতুরতায় সফল হতে পারেন নি বরং একটি ক্যাডার তাদের গোষ্ঠী-স্বার্থে সিভিল সার্ভিসে স্বৈরাচারীত্ব কায়েম করেছে।

পত্রিকার বরাত দিয়ে বক্তারা আরও বলেন, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কোটাবিহীন মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনের ঘোষণা দিলেও পরবর্তিতে এরশাদের সরকার কোটাভিত্তিক ডিএস পুল গঠন করে রাষ্ট্রের স্বার্থকে একটি ক্যাডারের স্বার্থে জলাঞ্জলি দিয়েছে, যে ধারা আজও বহাল রয়েছে।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন।

জনাব ফিরোজ আহমেদ প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের সদস্য বলেন, করোনা মহামারিতে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া হয় নি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আর ব্যবসায়ীরা। ফলে অঘটন যা হওয়ার তাই হয়েছে। তিনি ড. আকবর আলী খানের বইয়ের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন বাংলাদেশের খারাপ আমলাতন্ত্র পুরো সরকার ব্যবস্থাকে গিলে খেয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসন ক্যাডার সরকার বা দেশের ক্রান্তিলগ্নে বারবার নিজেদের পক্ষে ক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছে।
বিগত এক বছরে প্রশাসনে ইতিবাচক কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না করায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।

গণ অধিকার পরিষদের সেক্রেটারি জনাব রাশেদ খান বলেন, যারাই বৈষম্যের শিকার হবেন, গণ অধিকার পরিষদ তাদের পক্ষে সোচ্চার হবে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় দেশ থেকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে।

বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস মাতাব্বর বলেন, ২৫ ক্যাডারের ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও বিপ্লবে রূপান্তরের আগেই তাদের সাথে বসে বৈষম্য নিরসন করা হোক। লেখা পড়া জানে না, এমন লোকদেরকে কারা নির্বাচনে পাশ করিয়ে নিয়ে আসলো জাতি সেটা জানতে চায়।

কৃষি ক্যাডারের প্রাক্তন পরিচালক ইকবাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, একটা ক্যাডারের পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধা পেতেই কি ২০২৪ সালের বিপ্লব ও রক্তক্ষরণ হয়েছে? তাহলে একটা ক্যাডার কেন সকল সুযোগ সুবিধা পেলেন?

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২৫ ক্যাডারের সকল সুযোগ সুবিধা বিএনপি সরকারের সময়েই প্রসারিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই বলেছেন, আমলাতন্ত্রে কোনো এলিটিজম থাকবে না। তিনি উপসচিব পুল করেছেন। এরপর খালেদা জিয়ার সরকার উপসচিব পুলকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোঃ জামিলুর রহমানের অনুষ্ঠানে পরিষদের সমন্বয়ক ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মোঃ আহসান হাবীব স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো, যা অদ্যাবধি এভাবে উদযাপিত হয়েছে বলে জানা যায়নি। দিবসটি পালন করায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদকে বক্তারা ধন্যবাদ জানান।

উল্লেখ্য, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ক্যাডারগুলোর মধ্যে সীমাহীন বৈষম্য দূর করতে এবং জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার‌ ও আলোচনা সভার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে সমস্যা ও তার সমাধান খুঁজে বের করে ঐকমত্য কমিশনে লিখিতভাবে জমা দেয়া হয়েছে। কমিশনের সাথে আলোচনা সভায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। কমিশনও সে বিষয়ে একমত পোষণ করেছে, বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে।

ডব্লিউ জি নিউজ ডেস্ক

Recommended For You

About the Author: Shafiul Islam