‘শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবী করিম (সা.)–এর কাজের তুলনা ইতিহাসে বিরল: আহমাদুল্লাহ’

বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি – সংগৃহীত,

জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, ‘শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবী করিম (সা.)–এর কাজের তুলনা ইতিহাসে বিরল। আমরা তাঁর বহু নীতিকথা শুনি ও উদাহরণ দেখি। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— তিনি নিজেই সেই নীতিগুলো জীবনে অনুসরণ করেছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি শুধু কথায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং কাজের মাধ্যমে তাদের বাস্তবায়ন করেছেন।’

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে সিরাতুন নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে ইবিতে ‘বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী প্রধান আকর্ষণ ও সিরাত বক্তা হিসেবে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সিরাত বক্তৃতায় শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের দিকে তাকাই— সেখানে যে রকম গণহত্যা চালানো হচ্ছে, শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে এবং সেই সব দেশ যারা মানবাধিকার শিক্ষা দেয়, তারাই বর্বরতাকে সমর্থন করছে। এটি গভীর চিন্তার বিষয়। কিন্তু এমন একটি যুদ্ধ কী ইতিহাসে ঘটেছে, মহানবীর (সাঃ) আমলে, যেখানে একটি শিশুও নিহত হয়েছে? কেউ কি তা দেখাতে পারবেন? প্রশ্ন করা হয়েছে, শিশুদের সাথে যুদ্ধের কী সম্পর্ক? এই প্রশ্নের মধ্যেই মানবতার মূল সংকেত নিহিত।’

শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)–এর ঘোষণাটি যুগান্তকারী ছিল— ‘শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি প্রদান করো।’ এই নির্দেশে নিহিত আছে শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের মূল পথনির্দেশ।

এছাড়াও তিনি বলেন, ‘বর্তমান সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদ ও বৈষম্যের যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে, তা আমাদের সামনে স্পষ্ট। কিন্তু যদি আমরা মহানবী (সা.)–এর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারি এবং মানুষকে সেই আদর্শে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে সমাজ থেকে সব ধরনের জবরদস্তি, অত্যাচার ও হানাহানি দূর হয়ে যাবে।’

‘মহানবী (সা.) আমাদের সামনে যে জীবনদর্শন, আদর্শ ও নীতি রেখে গেছেন, সেগুলো আজকের অস্থির ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিশ্বে সব সমস্যার সমাধানের জন্য সবচেয়ে বাস্তব ও প্রাসঙ্গিক। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে ভিন্নমত ও ভিন্ন আদর্শের মানুষকে সহ্য করতে হয় এবং তাঁদের সঙ্গে মিলেমিশে সমাজ গঠন করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে তিনি যে মদিনা সনদ প্রণয়ন করেছিলেন, সেটি আজও পৃথিবীর ইতিহাসে একটি রোল মডেল। যেখানে ভিন্ন ধর্মের মানুষ একত্রে নিয়ে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়েছিল।’— বলে শায়খ আহমাদুল্লাহ যুক্ত করেন।

অনুষ্ঠানটি ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ. ব. ম. ছিদ্দিকুর রহমান আশরাফীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান আকর্ষণ সিরাত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বতন্ত্র গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যেখানে মহানবী (সা.)–এর জীবন, আদর্শ ও কর্ম নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা করা হবে। সেই গবেষণার ফলাফলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে মহানবীর (সা.)–এর শিক্ষা ও নীতিমালা আরও বিস্তৃতভাবে পৌঁছে যায়।’ 

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ আমাদেরকে বিচলিত করছে। তবে এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য আমরা প্রায়শই দূরের কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করি যা কার্যকর নয়। তবে আমাদের মহানবীর (সা.)–এর আদর্শ অনুসরণ করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

Recommended For You

About the Author: Shafiul Islam