

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে আজ থেকে ৯২ দিন বনজীবি ও পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য বনজীবি,পর্যটক ও মৎস্যজীবি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরারেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী হাবিবুল ইসলাম । গত দুই তিন দিন ধরে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে সকলকে জানানোর উদ্দেশ্যে। একই সাথে সুন্দরবনের মধ্যে টহল জোরদার করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ বনটহল ফাঁড়ির ফরেস্টার নির্মল মন্ডল বলেন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ করে মাছের ও বন্য প্রাণির প্রজনন মৌসুম থাকায় আগামী তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। এই সময়ে কোন প্রকার অনুমতিপত্র (পাশ) দেওয়া হবে না। একইসাথে পর্যটকবৃন্দও সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তবে এ নিষেধাজ্ঞায় বননির্ভরশীল বনজীবিরা, ট্রলারচালক, মৎস্যজীবিবৃন্দ, ট্যুরঅপারেটরবৃন্দ কিভাবে সংসার চালাবেন এনিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। মৎস্যজীবি জেলেরা বলেন বন্ধের সময় যে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয় সেটি চাহিদার তুলনায় কম। সরকারি সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন সুন্দরবন পেশাজীবিরা।
এদিকে সুন্দরবনের মধ্যে থাকা জেলেদের সকলকে শনিবার(৩১মে) এর মধ্যে লোকালয়ে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। ফরেস্টার নির্মল মন্ডল বলেন গত ২/৩ দিন সুন্দরবনের মধ্যে পেট্রোল টিমে ছিলেন। বনে অবস্থানকারী জেলেদেরকে শনিবারের মধ্যে ফিরতে বলা হয়েছে। অনেকে ইতিপূর্বে ফিরে এসে নৌকা মেরামত করার জন্য উপরে তুলেছেন বা ভাবছেন।
দাতিনাখালী এলাকার জেলে আজগর আলী, রবিউল ইসলাম বলেন তিন মাস বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা বন্ধ। কিভাবে পরিবারে ব্যয় নির্বাহ করব এটা নিয়ে চিন্তায় আছি। অনেকে বলেছেন মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক মৎস্য আহরণ সম্পূর্নরুপে নিষিদ্ধ। আবার ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ এটা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় মৎস্য আহরণে সমস্যার সৃষ্টি হয় এর ফলে আয় কমে যায়।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার তুষার মজুমদার বলেন শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৩ হাজার ৯২৮ জন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৮৫৬ জন ও নারী জেলে ৭ হাজার ৭৩ জন। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় ভিজিএফ সহায়তায় চাল পাবেন ৮ হাজার ৩২৪ জন। এসব জেলেরা চাল পাবেন কার্ড প্রতি ৫৬ কেজি হারে। জানা যায়, পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরারেঞ্জে বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী ৪টি ষ্টেশনের আওতায় প্রায় ২ হাজার ৯০০ শত
বিএলসি রয়েছে।
অপরদিকে ট্যুর অপারেটর ও ট্রলার চালকরা বলেন তাদের এই ৯২ দিন একরকম হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। সুন্দরবনে পর্যটক নিষিদ্ধ সেকারণে ট্রলার ভাড়াও বন্ধ।
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরারেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী হাবিবুর রহমান বলেন জুন,জুলাই ও আগষ্ট বনজ সম্পদ সংরক্ষণে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সুন্দরবনে বনজীবি ও পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। সুন্দরবনকে বিশ্রাম দিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা হয়। বন্ধ সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে টহল জোরদার থাকবে বলেও জানান।
রনজিৎ বর্মন (শ্যামনগর)সাতক্ষীরা প্রতিনিধি