জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাস সাধারণত ইলিশ মৌসুম হিসেবে পরিচিত। ইলিশের মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। অথচ দেশের নদ-নদীতে ইলিশ যেন একেবারেই অধরা। সাগরে অবশ্য কিছু ইলিশ মিলছে, তবে তা প্রত্যাশিত না হওয়ায় এবার শুরু থেকেই দাম ছিল আকাশচুম্বী। এরই মধ্যে ভারতে রপ্তানির খবরে ইলিশের দাম আরও বেড়েছে। তাই মধ্য ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে জাতীয় মাছ ইলিশ।
ভারতে ইলিশ রপ্তানির খবর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারভেদে মণপ্রতি ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে গেছে। বাজারে ইলিশের দাম বেশি বলে সাধারণ ক্রেতা-ভোক্তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
এদিকে প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে ১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞার পরপরই শেষ হবে ইলিশের মৌসুম। তখন আবার জাটকা ধরার ওপর আট মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
বরগুনার পাইকারি ব্যবসায়ী জহির সিকদার বলেন, বাজারে মাছের চাহিদা বেশি, কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। গতকাল এই পাইকারি বাজারে ৩৭০ মণ ইলিশ এসেছে। এর মধ্যে ৩০০ মণই ছোট, যার ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। বাকি প্রায় ৭০ মণ এর ওপরের বিভিন্ন ওজনের।
দেশের অন্যতম বড় মৎস্যকেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন পরিচালিত এই অবতরণকেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে ইলিশ রপ্তানির খবরে এখানে পাইকারি বাজারে মাছের দাম বেড়েছে। মঙ্গলবার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৭৫ হাজার টাকা মণ দরে। ৭০০ থেকে ৯৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৮ হাজার টাকা মণ। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৬ হাজার টাকা। ৩০০ থেকে ৫৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার টাকা মণ দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাথরঘাটায় দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ ইলিশের দাম চার থেকে আট হাজার টাকা বেড়েছে। এটা আরও বাড়তে পারে।
সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পেতে ভিজিট করুন https://worldglobal24.com/latest/
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্তের কথা শনিবার জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তারের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরের মধ্যে আগ্রহী ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়।
২০১৯ সাল থেকে দুর্গাপূজার আগে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। এবারও এই রপ্তানি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে অনিশ্চয়তা ছিল। শুরুতে সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য ইলিশ রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নিলেও শনিবার এ সিদ্ধান্ত বদলায়। ওই দিন ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এবার এমনিতেই ইলিশ আহরণ কম, এ জন্য দাম শুরু থেকেই অস্বাভাবিক। রপ্তানির কারণে ও চাহিদা বাড়ার কারণে দাম আরও বাড়তির দিকে।