রাজধানীসহ সারাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ   

রাজধানীসহ সারাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভ   

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে ফের উত্তাল রাজধানীসহ সারাদেশ। গণগ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ, হত্যাকাণ্ডে বিচার, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ ৯ দফা দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (৩ আগস্ট) কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন সড়কে দলে দলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয় শিক্ষার্থীরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। চরমে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। থমথমে অবস্থা বিরাজ করে রাজধানীজুড়ে। রাজপথ থেকে তাদের হটানোর চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কোথাও কোথাও লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এতে আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন

এদিকে সকাল থেকেই রাজধানীর সাইন্সল্যাব, শহীদ মিনার, যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, মেরুল বাড্ডা, নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড, মিরপুর-১০,আফতাবনগর, রামপুরা, বনশ্রী,উত্তরায়   অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে টাঙ্গালই, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, খুলনা, চট্টগ্রাম, জাবি,জাবি, ইবিসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।

এসময় ছাত্র ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে অংশ নেন ‘৭১’র রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের’ ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে…, ‘রক্তের দাগ দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক….’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিক্ষোভ

আজ দুপুর ১২টা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি জানায় পথচারী, রিকশাচালক থেকে  শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জনগণ। এই বিক্ষোভে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামতে দেখা যায় জনতার ঢল। এর ফলে সায়েন্সল্যাব এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা

স্লোগানে উত্তাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা

কোটা সংস্কারের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল ৩টার আগেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৩টায় সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। শহীদ মিনারের মূল বেদিতে দাঁড়িয়ে নাহিদ ইসলাম, সার্জিস আলমসহ অন্য সমন্বয়কদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় দোয়েল চত্বর এবং বকশীবাজারমুখী বুয়েটের সড়ক পর্যন্ত মানুষের ঢল দেখা যায়।

এ সময় ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দিবো রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো,’ ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর,’ ‘ছাত্রসমাজ দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক….’, ‘এক দফা এক দাবি’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকা ছিল লোকে লোকারণ্য।

উত্তরায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে উত্তরা ও আফতাবনগরে জড়ো হয় কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইউআইটিএস ও সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। এছাড়া বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেয়। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা সড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ

মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করে পরে দুপুর ১টার দিকে গোলচত্বরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুরুতে সংখ্যায় কম থাকলেও পরে সেখানে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাজারো বিক্ষোভকারী সেখানে ৯ দফা দাবিসহ বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দেখা যায়।

প্রগতি সরণি এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ

দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা প্রধান সড়কে নেমে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় প্রগতি সরণির যানচলাচল। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছেন এই বিক্ষোভ সমাবেশে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের গণমিছিল

নারায়ণগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া শহীদ মিনারে এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে আবার চাষাড়া মোড় এলাকা এসে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেন তারা। শিক্ষার্থীরা এ সময় তাদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

যাত্রাবাড়ীতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে শনিবার দুপুরে যাত্রাবাড়ী, কাজলা ও শনিড়আখরা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা একযোগে ৯ দফা দাবি আদায়ে স্লোগান দেয়।শিক্ষার্থীরা বলেন, ৯ দফা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। দেশজুড়ে আমাদের ভাই-বোনদের হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিতে থাকেন।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। কোনো যানবাহন চলতে দিচ্ছে না তারা। তাদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা-গুলিবর্ষণ, আহত অর্ধশতাধিক

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে পাঁচজন। আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর সোয়া ১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী কুমিল্লা জিলা স্কুলের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও গণমিছিল শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্টেডিয়ামের সামনে অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশলাইন হয়ে রেইসকোর্স এলাকা যাওয়ার পথে পেছন দিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে। এ সময় শটগানের গুলিতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। আহত হয় অন্তত ২৫ জন। পরে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার ঢল, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার দুপুর থেকে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার নিউমার্কেট মোড় এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে। এসময় মোড়ে মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। বিভিন্ন সড়ক দিয়ে একের পর এক মিছিলযোগে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ করতে দেখা যায়।

উত্তাল পাবনা শহর শিক্ষার্থীদের গণমিছিল

এদিকে ছাত্রছাত্রীদের হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়।এসময় রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনকে আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থীদের তালি দিয়ে সংহতি জানাতে দেখা যায়।

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You