সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আজও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি কর্মসূচি শুরু হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি হাইওয়ে এবং রেলপথও এই ব্লকেডের আওতায় থাকবে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আন্দোলনের কেন্দ্র রাজধানীর শাহবাগে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, অনেকে আমাদের জনদুর্ভোগের কথা বলতে চান। কিন্তু আমরা দেখেছি এই কর্মসূচি জনমত গঠনের এক অভিনব পদ্ধতি। বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ তাদের সন্তানদের জন্য হলেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে আমাদের বলেন। তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে আমাদের ব্লকেড কর্মসূচি চলবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হবেন শিক্ষার্থীরা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড পালিত হবে।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
আসিফ মাহমুদ বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে দেশের আনাচে-কানাচে বাংলা ব্লকেড অব্যাহত রাখবে। কর্মসূচি অনুযায়ী, মিছিল নিয়ে শাহবাগ, বাংলা মোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, মৎস্য ভবন, মিন্টু রোড, কাঁটাবন ও চানখাঁরপুল অবরোধ করবেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে গতকাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা কলেজ শাখার সমন্বয়ক নাজমুল হাসান বলেন, আমরা যখন তীব্র গরমের মধ্যে সড়কে ঘাম ঝরাচ্ছি, তখন আপিল বিভাগ থেকে কোটা নিয়ে যে রায় ছিল; সেটা বহাল রেখেছে। আমরা ছাত্রসমাজ আপিল বিভাগ থেকে যে রায় দিয়েছে, সেই রায়কে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা বলতে চাই, ছাত্রসমাজের প্রাণের এক দফা দাবি হচ্ছে, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে। সংবিধানের প্রতি আমরা সম্মান রেখে বলছি, সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে যৌক্তিকভাবে কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত ছাত্রসমাজের এক দফা দাবি আদায় না হবে, আমরা রাজপথ থেকে ফিরে যাবো না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আয়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আমরা চাই সরকারের নির্বাহী বিভাগ একটি কমিশন গঠন করে কোটার যৌক্তিক সংস্করণ করুক। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত কোটা থাকতে পারে। দাবি মেনে নেওয়া না পর্যন্ত সারা দেশে আন্দোলন চলবে।
এদিকে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫% কোটা বহাল করে অন্য সব কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, ফার্মগেট, বাংলা মোটর, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন। সায়েন্সল্যাব,নীলক্ষেত ও চানখারপুল মোড় অবরোধন করেন ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পুরান ঢাকা, গুলিস্তান,পল্টন, জিপিও মোড় অবরোধ করেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মহাখালীতে রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কোটা নয়, মেধা চাই’, ‘চাকরি পেতে, স্বচ্ছ নিয়োগ চাই’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ‘দফা এক দাবি এত, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’,‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘চাকরি তার, মেধা যার’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পর সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থা বাতিল করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। গত ৫ জুন রায় ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার বাধা দূর হয়। ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। গতকাল বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও রিট আবেদনকারীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী শুনানি করেন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দুদিন অর্ধদিবস অবরোধ চলার পর মঙ্গলবার বিরতি দেওয়া হয়।