গাইবান্ধার সদর থানায় তিন সাংবাদিকের নামে চাঁদাবাজির মামলার ঘটনায় সদর থানার ওসি মাসুদ রানার বিরুদ্ধে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহণ করে, তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা মামলা রুজুর অভিযোগ করেছেন গাইবান্ধার ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মিলন খন্দকার।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি (পুলিশ হেডকোয়াটার্স, ঢাকা) বরাবর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এই অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গাইবান্ধায় কোন বালুমহাল না থাকায় এবং গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১২নং কামারজানী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নদী বেষ্টিত হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকেই স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের দালালদের সাথে সম্পর্ক করে নদীতে ড্রেজার (বালু উত্তোলনকারী মেশিন) বসিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু অবৈধভাবে তুলে বিক্রি করেই আসছিল। ফলে একদিকে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি এবং অপর দিকে দিন-রাত উত্তোলনকৃত বালু বড় বড় যানবাহনের মাধ্যমে পরিবহনের ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল।
এসব ঘটনা তুলে সংঘবদ্ধ চক্রটির বিরুদ্ধে চলতি বছরের গত ১৭ ফেব্রুয়ারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন আনন্দ টিভিতে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রচার হয়। সেই সাথে প্রিন্ট পত্রিকা, অনলাইন পোর্টালসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সংবাদটি। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপকভাবে প্রচার হতে থাকে।
পরে সংবাদের সূত্র ধরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কামারজানি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খন্দকার আজিজুর রহমান বাদী হয়ে এই চক্রের রানা মিয়া ও সাইফুল ইসলামের নাম উল্লেখসহ ১২ থেকে ১৫ জন অজ্ঞাতনামা অবৈধ বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর থানায় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ২৯।
এছাড়া এসব ঘটনা ও প্রচারিত সংবাদের প্রেক্ষিতে জেলায় বিভিন্ন মহলে থানা পুলিশ ও প্রশাসনের নামে নেতিবাচক আলোচনা ও সমালোচনা হতে থাকে। ফলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে বালু পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত অন্তত ১৫ টি গাড়ী জব্দ করাসহ অবৈধভাবে তুলে মজুদকৃত বালু কয়েক দফায় ন ২০ লাখ টাকা নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করেন। যা সরকারি কোষাগারে জমা হয়।
এতেই অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের বিপুল কর্মযোগ্য বন্ধ হওয়ায় সংঘবদ্ধ চক্রটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পর চলতি বছরের ২৮ মার্চ বাদি হয়ে সাংবাদিক মিলন খন্দকার, সুমন ও রকির বিরুদ্ধে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগ পেয়ে ২৪ এপ্রিল সদর থানার ওসি মাসুদ রানা মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে, কোনো তদন্ত ছাড়াই ভিত্তিহীন ও হয়রানীমুলক চাঁদাবাজীর মিথ্যা মামলা রুজু করেন।
অভিযোগে বিস্ময় প্রকাশ করে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় রানা মিয়া নামে যাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে তিনি সংবাদ প্রকাশের পরে কামারজানি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খন্দকার আজিজুর রহমানের গাইবান্ধা সদর থানায় দায়ের করা বালু মহাল আইনের মামলার এক নম্বর আসামী। এখানেই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম এবং সাজানো স্বাক্ষী রানা মিয়া উভয়ই অবৈধ বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, অভিযোগ করতেই পারে। মামলাটি অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।