ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে তার ফেলে দেওয়া মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহে চালানো অভিযান শেষ হয়েছে।
বুধবার (২৬ জুন) চালানো এ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ। তবে গ্যাস বাবুর কোনো ফোন এখনো পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযমের নেতৃত্বে জেলেদের পুকুরে নামিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঝিনাইদহ শহর কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখা হয়।
বুধবার সকালে জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে আনা হয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে। শহরের পায়রা চত্বরের উত্তর পাশের একটি পুকুরে জেলে নামিয়ে মোবাইল ফোন উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক অভিযান শেষ করে পরে শহরের স্টেডিয়াম এলাকার আরেকটি পুকুরে অভিযান চালানো হয়।
সেখানে অভিযানের একপর্যায়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে মোট সাতজন অংশ নেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা সাগরে বা মাটির নিচে যেখানেই থাকুক না কেন, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব। কোনো ভালো মানুষকে হয়রানি করা হবে না এবং অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আনার হত্যায় বেরিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতাদের নাম। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তদন্তে অনেকেই ফেঁসে যাবেন।
এসময় আনার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ডিএমপির ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযম, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম উল আহসানসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে নামেন তিনি ডিবিপ্রধান।
গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে গ্যাস বাবুকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটক বাবু এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শিমুল ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয়।
গ্যাস বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মোবাইল ফোনগুলো কোথায় কোথায় ফেলেছেন তা তিনি বলেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় আদালতের কাছে আবেদন করা হয় বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। গ্যাস বাবু আদালতে বলেছেন, একজন নেতার নির্দেশে তিনি আশেপাশের কোনো এক নালা বা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন মোবাইল ফোন।
গ্যাস বাবু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মোবাইল ফোনগুলো কোথায় কোথায় ফেলেছেন তা তিনি বলেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় আদালতের কাছে আবেদন করা হয় বাবুকে সঙ্গে নিয়ে আলামত উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে। গ্যাস বাবু আদালতে বলেছেন, একজন নেতার নির্দেশে তিনি আশেপাশের কোনো এক নালা বা পুকুরে ফেলে দিয়েছেন মোবাইল ফোন।
গত ১২ মে ভারতের কলকাতায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার (৫৭)। ২২ মে সকালে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত পাওয়া গেলেও তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিকিৎসার প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার পর কলকাতার বরাহনগরে পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে প্রথম উঠেছিলেন আনার। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর গত ১৮ মে কলকাতার বরাহানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস।
আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান কলকাতায় গিয়েছিলেন আমেরিকার পাসপোর্ট ব্যবহার করে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যে জানা যায় যে কলকাতায় সঞ্জীবা গার্ডেনসে আখতারুজ্জামানের ভাড়া বাসায় খুন করা হয় আনারকে।
ঘটনার দিন চারজন আখতারুজ্জামানের ফ্ল্যাটে যান। সিসিটিভিতে দেখা গেছে, তিনজন বেরিয়ে এসেছেন, শুধু এমপি আনার ছাড়া।
গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে গ্যাস বাবুকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাবু ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শিমুল ভূঁইয়ার নিকটাত্মীয় এই বাবু।