চাকরি ও ক্যারিয়ারের প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য আপনার প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। সেইসঙ্গে থাকা চাই আরও অনেক বিষয়ে দক্ষতা। বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ার সফল হতে যে দক্ষতাগুলো প্রয়োজন হয় ভবিষ্যতে তার পাশাপাশি আরও বহু গুণের প্রয়োজন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে বা পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণ-তরুণীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে চাকরি পাওয়া।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে শুধু বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা থাকলেই আপনি কাঙ্ক্ষিত চাকরি না-ও পেতে পারেন। বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার সঙ্গে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তারা বর্তমানে চাকরিপ্রার্থীদের ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ কর্মীদের ব্যক্তিগত দক্ষতাও প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
আর তাই সিভিতে যখন তরুণেরা কিছু দক্ষ তা যুক্ত করেন, তখন সে সিভিটি অন্যদের থেকে আলাদা হয় এবং তাকে পরবর্তী ধাপের জন্য ডাকা হয়। চাকরির বাজারে প্রবেশের আগে এমনই ১০টি দক্ষতা রয়েছে, যা করা থাকলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন আপনি।
মাইক্রোসফট এক্সেল:
কর্মক্ষেত্রে বহুল ব্যবহূত একটি সফটওয়্যার মাইক্রোসফট এক্সেল। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই একজন তরুণ মাইক্রোসফট এক্সেলের অ আ ক খ শিখে ফেলেন। তবে কর্মজীবনে হিসাব-নিকাশ ছাড়া নানা ধরনের বিশ্লেষণধর্মী কাজ ও সৃজনশীলভাবে তথ্য উপস্থাপনের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেলের ওপর দখল থাকা বেশ জরুরি। তাই এডএক্স প্ল্যাটফর্মে মাইক্রোসফটের অ্যানালাইজিং অ্যান্ড ভিজ্যুয়ালাইজিং ডেটা উইথ এক্সেল কোর্সটি করা থাকলে চাকরিপ্রার্থী কিংবা সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন—এমন তরুণদের জন্য তা হবে বেশ উপকারী।
পারসোনাল ব্র্যান্ডিং ও নেটওয়ার্কিং:
একজন চাকরিপ্রার্থী তরুণ হিসেবে আপনার কাজ শেখার পাশাপাশি সেই কাজগুলো সম্পর্কে আপনি যে সম্যক ধারণা রাখেন এবং সফলভাবে কাজগুলো সম্পাদন করার সক্ষমতা আপনি অর্জন করেছেন, সেগুলো আপনি যাদের জানাতে চান, তাদের জানানোর মতো যোগাযোগ করার দক্ষতা থাকাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই পারসোনাল ব্র্যান্ডিং বা নিজেকে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে পরিচয় করানোর কৌশলটা জেনে রাখাও প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং বা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। একটি উডেমির দ্য আলটিমেট পারসোনাল ব্র্যান্ডিং কোর্সটি এ ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশনস:
প্রজেক্ট বা প্রকল্প শব্দটি শুনলে যদিও এনজিও বা উন্নয়ন খাত-সংশ্লিষ্ট কাজের কথা মনে হতে পারে, কর্মজীবনের প্রতিটি কাজই একেকটি প্রকল্পের মতো। তাই একজন চাকরিপ্রার্থী কিংবা তরুণ চাকরিজীবীর জন্য প্রকল্প পরিচালনার মৌলিক বিষয়গুলো—যেমন প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলিত ও দ্রুত ব্যবস্থাপনার (agile project management) পার্থক্য, একটি উদ্যোগের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিরূপণ, পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। লিংকডইনের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশনস কোর্সটি থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি জেনে রাখা যেতে পারে।
থিঙ্কিং:
প্রথম প্রথম ডিজাইন থিঙ্কিং শুনলে আঁকিবুঁকির কথা মাথায় এলেও ডিজাইন থিঙ্কিং মূলত একটি সমস্যা সমাধানের সৃজনশীল পন্থা। একটি সমস্যাকে সমস্যাটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে দেখতে শেখা এবং তাদের মতামত আমলে নিয়ে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করে সমস্যা সমাধানে কাজ করাই ডিজাইন থিঙ্কিং কিংবা হিউম্যান সেন্টার্ড ডিজাইন। অন্যের জুতায় পা গলিয়ে দেখার মানসিকতা এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করার প্রায়োগিক জ্ঞান একজন তরুণকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সহায়কের ভূমিকা পালন করে। ডেভেলপমেন্ট, ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ইউ টুলকিট থেকে ডিজাইন থিঙ্কিং বিষয়ে ধারণা রাখা যেতে পারে।
টাইম ম্যানেজমেন্ট:
সময়ের সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি কোন কাজটা কখন করতে হবে, সেটি সম্পর্কে ধারণা রাখা একজন তরুণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কোন কাজ কখন এবং কত দ্রুত করা উচিত, তা নির্ধারণে আর্জেন্ট-ইমপর্টেন্ট ম্যাট্রিকস বহুল প্রচলিত, নিত্য পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে প্রচলিত ধারণাগুলো আগের মতো কার্যকর থাকছে না। তাই সময় ব্যবস্থাপনা বা টাইম ম্যানেজমেন্টের ওপর কোর্স করা থাকলে, সেটি কর্মক্ষেত্রে ও চাকরি পেতে একজন তরুণকে দিতে পারে বাড়তি সুবিধা। এই বিষয়ে কোর্সরেটের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইরভিনের কোর্সটি করে রাখা যেতে পারে।
যোগাযোগ দক্ষতা:
সব ধরনের চাকরির ক্ষেত্রেই যেগাযোগের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি গ্রাহক কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলেন, ইমেইল আদান-প্রদান করেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বর্তমানে বেশিরভাগ যোগাযোগ ইমেইল, টেক্সট, চ্যাট ও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হয়। তাই কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স:
ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স হলো নিজের এবং অন্যদের আবেগকে উপলব্ধি ও মূল্যায়ন করার বুদ্ধিমত্তা। আপনি আপনার চারপাশের মানুষদের এবং কর্মক্ষেত্রে যে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো গড়ে ওঠে সেগুলোর প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল। তাই সহকর্মীর আবেগ বোঝা এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে পারাটা জরুরি। ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স থাকা প্রয়োজন।
ক্রিটিকাল থিংকিং:
ক্রিটিকাল থিংকিং কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দক্ষতা। ক্রিটিকাল থিংকিং হচ্ছে কোনো তথ্য বা ঘটনার বাস্তবতা ও ধারণার মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ বোঝার জন্য স্পষ্ট এবং যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ঘটনা ও বাস্তবতার মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া জটিল হয়ে পড়েছে। তাই কোনো কিছু ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্তে উপনীত না হয়ে নিজের মধ্যে প্রশ্ন জাগাতে হবে। কী হতে পারে বা কেন এমন হলো, এর নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য এসব প্রশ্ন থাকতে হবে। চাকরির বাজারে এই দক্ষতাকে প্রায়োরিটি দেওয়া হয় কারণ ক্রিটিকাল থিংকিং এবিলিটি যত ভালো হবে সে তত যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে।
সময় ব্যবস্থাপনা:
নিজের কাজ সময়মত দক্ষতার সঙ্গে শেষ করাই সময় ব্যবস্থাপনা। কোনো দায়িত্ব পালনকালে সময়কে কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন তা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় অফিসের কাজ বাড়িতেও করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রেও সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
নেতৃত্বগুণ:
কাজের যোগ্যতা ও যোগাযোগ দক্ষতার পাশাপাশি বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে নেতৃত্বগুণ প্রয়োজন। কর্তৃপক্ষ এমন কর্মী চান, যারা তাদের নিয়মিত কাজের বাইরে যেতে আগ্রহী। আপনার মধ্যে যদি নেতৃত্বগুণ থাকে, তাহলে আপনি দলবদ্ধভাবে কাজ করার পাশাপাশি অন্যদের চেয়েও ভালো করতে পারবেন। তাই কর্মক্ষেত্রে নিজের নেতৃত্বগুণ প্রদর্শন করুন।
এছাড়া নিজের ক্যারিয়ার বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে অন্য কারো সহায়তা নেওয়া খুব একটা কার্যকর হয় না। তাই ক্যারিয়ারের নানা বিষয় বিশ্লেষণ করে নিজের জন্য উপযুক্ত পথ খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। এতে নিজের দুর্বলতা ও সম্ভাবনার বিষয়গুলোও সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। শুধু সিভি দিয়েই চাকরি পাওয়া যায় না। ইন্টারভিউতে গিয়ে এগুলোর স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়। নানাভাবে নিজের যোগ্যতা বর্ণনা করতে হয়।