গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বাস্তুচ্যুতদের একটি শিবিরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এমন পদক্ষেপের জন্য বৈশ্বিক নিন্দার মুখে পড়েছে ইসরায়েল। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রাফায় অভিযানে সীমা লঙ্ঘন করেনি ইসরায়েল।
বুধবার (২৯ মে) হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন ইসরায়েল গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এমনটা মনে করে না।
ইসরায়েলি বাহিনী শহরটি কেন্দ্রে পৌঁছানো এবং মিশর সীমান্তে নজরদারির জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি পাহাড় দখলের খবর আসার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি এ মন্তব্য করলেন।
চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যদি ইসরায়েল রাফার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করে যেখানে লাখের বেশি বেসামরিক নাগরিক এখনো আশ্রিত আছে বলে মনে করা হচ্ছে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে অস্ত্র সরবরাহ করা সীমিত করে দেবে।
কিরবি একই সাথে ইসরায়েলের বিমান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ওই হামলায় রবিবার বাস্তুচ্যুতদের একটি তাঁবুর শিবিরে আগুন ধরে গেলে অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের মধ্যে অনেক নারী, শিশু ও বৃ্দ্ধও ছিল। মঙ্গলবার রাতে সর্বশেষ হামলায় ১৩ জন নারী ও মেয়ে শিশুসহ আরও কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তাদের বিশ্বাস হামাসের মজুদ করে রাখা অস্ত্র বিস্ফোরণের কারণেই ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তারা হামাসকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং তাদের দুজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করেছে।
জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, “রবিবারের অভিযানের যেসব ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ মারা গেছে- তা ছিল ‘হৃদয়বিদারক’ ও ‘ভয়ঙ্কর’, সংঘাতের কারণে কোনো নিরীহ মানুষের জীবনহানি হওয়া উচিত নয়।”
তিনি স্বীকার করেন, ইসরায়েল ঘটনার তদন্ত করছে এবং একই সাথে বলেছেন যে রাফাহর সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে তার আগের বক্তব্য পরিবর্তনের কোনো নীতি তার নেই।
তিনি বলেন, “একটি বড় ধরনের স্থল অভিযান হয়েছে এমনটি আমরা এখনো বিশ্বাস করি না….এবং এ পর্যায়ে আমরা সেটি দেখিনি। আমরা রাফাহ শহরে তাদের তেমন ধ্বংস করতে দেখিনি। সেখানে তেমন ধরনের অভিযান ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলে প্রেসিডেস্ট আগেই জানিয়েছেন।”
কিরবি আরও দাবি করেন, “আমরা তাদের বড় ইউনিট, বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে অনেকগুলো লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে তেমন সমন্বিত কিছু করতে দেখিনি”।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মে রাতে হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর সেটাকে উপযুক্ত নয় বলে প্রত্যাখ্যান করে নেতানিয়াহু সরকার। এরপর দিন থেকেই মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং- গাজায় প্রবেশের একমাত্র দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে রাফায় স্থল অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে ট্যাংক ও সৈন্যরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের দিকে। একই সাথে তারা মিশর সীমান্তের দিকেও অগ্রসর হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় পাল্টা অভিযান শুরু করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গাজায় এ পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে আরও ৮১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
খবর: বিবিসি