ফেসবুক পরিচয়ে প্রেম করে ভৈরব মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরতে এসে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করল প্রেমিকসহ দুজন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সহযোগীসহ মোট ৮ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় ঘটনাটি ঘটে ভৈরব মেঘনা নদীর পাড় রেলওয়ের জোড়া সেতু সংলগ্ন এলাকায়। জানা যায়, গত ৬ মাস আগে ফেসবুক পরিচয়ে প্রেম। এই প্রেমের সুবাদে ভৈরবের মেঘনা ব্রীজের নিচে ঘুরতে আসেন প্রেমিকা সুরাইয়া বেগম ও প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাসসহ প্রেমিকের আরও একজন বন্ধু। তারা সবাই কিশোর বয়সী। ঘুরতে এসে প্রেমিক ও এক ছিনতাইকারীর হাতে ধর্ষণের শিকার হন ওই কিশোরী প্রেমিকা। ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর বাড়ি কটিয়াদি উপজেলার নিলক্ষী হাফানিয়া গ্রামে।
গত ২৩ মে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এঘটনা ঘটেছে ভৈরব মেঘনা রেল ব্রীজের পাশের একটি ঝোঁপে। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযুক্ত প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাস ও ছিনতাইকারী নির্জন ওরফে আরিয়ান সহ সহযোগী আরও ৬জন গ্রেফতার হয়েছে পুলিশের হাতে। গ্রেফতার হওয়া ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাস (১৮) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পিরিজকান্দি গ্রামের মনিন্দ্র দাসের ছেলে এবং নির্জন ওরফে আরিয়ান (১৭) ভৈরব শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার মুকসুদ মিয়ার বাড়ির সুমন মিয়ার ছেলে।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
ধর্ষণে সহযোগিতা করায় গ্রেফতারকৃত ৬কিশোর হলো- প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাসের বন্ধু পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু মিয়ার ছেলে রাব্বি (১৯), ভৈরব শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকার সুজন মিয়ার ছেলে সান (১৭), একই এলাকার আংগুর মিয়ার ছেলে আবদুল্লাহ (১৮), শহরের কমলপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে পাপন (১৮), শহরের চন্ডিবের এলাকার মিলন মিয়ার ছেলে হাসান (১৭), একই এলাকার আনাছ মিয়ার ছেলে ফুয়াদ (১৯)।
গ্রেফতারকৃত ৮জনের মধ্যে প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাস ও ছিনতাইকারী আরিয়ান ধর্ষণ করেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই কিশোরী। আর অন্য ৬জন কিশোর ওই অপরাধের সহযোগীতাকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই ধর্ষীতার বাবা রহমত আলী বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি মামলা করে। মামলার পর শুক্রবার দুপুরে অভিযুক্তদের কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায় ভৈরব থানা পুলিশ এবং ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ওই প্রেমিকা কিশোরীকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পলাশ চন্দ্র দাসের পরিচয় হয় ওই প্রেমিকা কিশোরীর। বৃহস্পতিবার তারা দুজন নিজদের মধ্য ফোনে যোগাযোগ করে প্রথমে ভৈরবের মানিকদী কালি নদী সেতু সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টে আড্ডা কথাবার্তা শেষ করে বিকেলের দিকে তারা দুজন মেঘনা নদীর পাড়ে ঘূরতে আসে। সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ব্রীজের পাশে থাকা একটি জঙ্গলের ঝোপে প্রেমিক পলাশ দাস প্রেমিকা ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এসময় ধর্ষণের ঘটনাটি দেখে ফেলে ওই এলাকায় অবস্থানরত কয়েকজন ছিনতাইকারী। তারা প্রেমিক প্রেমিকাকে আটক করে দুটি মোবাইলসহ তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
ঘটনার সুযোগ বুঝে ছিনতাইকারী নির্জন ওরফে আরিয়ান জোরপুর্বক ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এসব ঘটনায় আরিয়ানকে সহযোগিতা করেন অপর সহযোগী ছিনতাইকারীরা। কিশোরীর কান্না চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। পরে প্রত্যক্ষদোর্ষী লোকজন পুলিশকে খবর দিলে তৎক্ষনাৎ ভৈরব শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কামাল মিয়া ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিম কিশোরীসহ ৮জনকে আটক করে ফাঁড়ি থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ঘটনা সমাধানের জন্য কয়েক ঘন্টা ধরে চেষ্টা করছেন অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন। এসময় ওই ভুক্তভোগী কিশোরীকে বুঝিয়ে ও তার কাছে মাফ চেয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ারও চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি সাংবাদিকরা অবগত হওয়ায় রাত ৯টার দিকে শহর ফাঁড়ি থেকে ভৈরব থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে ওই কিশোরী পুলিশের সামনে ধর্ষণের অভিযোগে চিহ্নিত করেন ছিনতাইকারী আরিয়ানকে। কিন্তু প্রেমিক পলাশ চন্দ্র দাসের ধর্ষণ করছে সেটা অস্বীকার করে প্রেমিকাকে মামলা থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে ওই কিশোরী। এসময় আটককৃতদের ভাষ্য ও স্বাক্ষীর পর ওই কিশোরী স্বীকার করেন তাকে পলাশ ও আরিয়ান দুইজন ধর্ষণ করেছে।
কিশোরী ও আসামীদের অভিভাবকরা রাত ১০টায় থানায় গিয়ে তদবীর করেন। শেষপর্যন্ত কিশোরী নারীর পিতা রহমত আলী বাদী হয়ে রাত ১২টায় ভৈরব থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। ওই মামলায় ধর্ষণের অভিযুক্ত করা হয় দুজনকে এবং অপর ৬জনকে অপরাধে সহযোগীতা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় তার অফিস রুমে মীমাংসায় বসতে পারে কিনা এ বিষয়ে ভৈরব শহর ফাঁড়ির ইনচার্জকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি বলেন কিশোরগঞ্জ থেকে তিনি ফাঁড়িতে আসতেছেন। ঘটনাটি তিনি অবগত আছেন কিন্তু তার রুমে মীমাংসা করতে বসেছে সেটা জানেনা তিনি। তিনি বলেন ধর্ষণের ঘটনায় মীমাংসার কোনো সুযোগ নাই। অবশ্যই মামলা হবে অভিযুক্ত বিরুদ্ধে।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সফিকুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে মেঘনা পাড়ে ঘূরতে এসে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনায় কয়েকজন ছিনতাইকারী এঘটনায় জড়িত রয়েছে। এব্যাপারে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে রাতেই থানায় একটি মামলা করে। নারীকে আজ শুক্রবার ডাক্তারী পরীক্ষা করতে কিশোরগন্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং আসামীদেরকে কিশোরগন্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। ডাক্তারের রিপোর্ট পাওয়ার পর আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।