ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের বাম্পার ফলনে স্বস্তিতে চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচের বাম্পার ফলনে স্বস্তিতে চাষিরা

ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভাল পাওয়ায় চাষিদের চেহারায় স্বস্তির ছাপ দেখা দিয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ভাউলার হাটসহ এলাকার কৃষকরা বেশ কয়েক বছর ধরে মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়ছে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মরিচের চাষ-আবাদ।

গত এক মাস ধরে পাকা মরিচ তুলে শুকিয়ে বিক্রি করছে এলাকার কৃষকরা। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং ৫,০০০ হাজার টাকা মন দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে স্বস্তির ছাপ দেখা দিয়েছে। সরজমিনে ভাউলার হাটে গিয়ে দেখা যায়,  হাজার হাজার কৃষক মরিচ নিয়ে এসেছে। এলাকার পাইকাররা তা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আড়ৎদার ও কোম্পানির কাছে কমিশন হিসেবে বিক্রি করছে। কেউবা সরাসরি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সপ্তাহে দুই দিন বসে ভাউলার হাট। প্রতি হাটে ১৫ থেকে ২০টি করে ট্রাকে লোড হয়ে ময়মনসিংহ ঢাকা, রাজশাহী, যশোর, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১২ টন শুকনো মরিচ ধরে। এতে করে গড়ে ৪৫০০ মন মরিচ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন   

স্থানীয় আড়ৎদার হাফিজুর রহমান বলেন, শুকনো মরিচের হাট হিসেবে ভাউলার হাট দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার। গত এক মাস ধরে বাজার শুরু হলেও ছয়-সাত মাস ধরে চলবে। এই হাটে জেলার গড়েয়া হাট, খোচাবাড়ী হাট, শীবগঞ্জ হাট, আখানগরহাট, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, দেবীগঞ্জের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ভাউলার হাটে মরিচ নিয়ে আসেন।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার জেলায় মোট ১৭০০শ ৭২ হেক্টর চলমান,জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন হয়েছে ১৮৮৫ হেক্টর। অতিরিক্ত হয়েছে ৪৮৫ হেক্টর। দিন দিন মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছে জেলার কৃষকরা।ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন। রায়পুর গ্রামের কৃষক প্রতিরণ রায় জানান, এবার এক একর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। উৎপাদন হয়েছে ৩০ মণ। যার মূল্য ১,৫০,০০০ টাকা। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৮৬০০০ টাকা। লাভে হবে ৬৪,০০০ টাকা। এবার ধানের দাম না পাওয়ায় আগামীতে মরিচের আবাদ বাড়াবেন।

জামালপুর গ্রামের দুলাল হোসেন এবং এলাকার স্থানীয়রা জানান মরিচের আবাদ ভাল হয়েছে। তবে ফলন ভাল হওয়ায় জিরা জাতের মরিচ চাষ বেশি হয়েছে। দুই একর জমি চাষ করে খরচ হয়েছে ১,৬০,০০০ টাকা। উৎপাদন হয়েছে ৬০ মন। ক্ষেতে আরও কিছু আছে যা ৪ থেকে ৫ মণ হবে। ৩২ মন বিক্রি করে পেছেন ১,৬০,০০০ টাকা। বাকীগুলো দেরিতে বিক্রি করলে আরও দাম পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, ধান আর করবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। আমন ধানের বীজতলা ফেলার সময় প্রায় শেষের দিকে হলেও এলাকার মানুষ এখনো তা ফেলছেন না। ধানের দাম কম যাওয়ার কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

মরিচ উৎপাদনে এলাকার কৃষক যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি নারী শ্রমিকরা মরিচ তুলে দিনে তিন থেকে চারশত টাকা পাচ্ছেন এবং পুরুষরা পাইকারী আড়তে মরিচ বস্তায় ঢুকানোর জন্য সারা দিনে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা রোজগার করছেন।

মরিচ চাষে এলাকায় ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও পানি সেচের জন্য গভীর নলকূপ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকার ব্যবস্থা নিলে উৎপাদন আরও বাড়বে এবং চাষীরা উৎসাহিত হবে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You