ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র তাপপ্রবাহে এবং অনাবৃষ্টির কারণে ঝরে পড়ছে আম-লিচুর গুটি। ফলে বড় অঙের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন বাগানিরা। আম ও লিচু গাছে সেচ ও কীটনাশকের মিশ্রণ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
আম-লিচুর জেলা হিসেবে সুনাম রয়েছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের। এ বছর জেলায় ৩২৩৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল কৃষি বিভাগের। অপরদিকে, ১৮৪২ একর জমিতে হয়েছে লিচুর আবাদ। এখান থেকে ১৫৮৫ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়ে রয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, বিগত কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় সারাদিনে ৩৭ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের আম বাগানগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, ঝরে পড়েছে দেড় মাস বয়সী আমের গুটি। গুটি ঝরা কমাতে নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দিচ্ছেন বাগানিরা। সেচ এবং স্প্রে করলেও অতিরিক্ত গরমে গুটি ঝরা কমানো যাচ্ছে না। বাগানিরা বলছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ আম-লিচুর গুটি ঝরে গেছে। অতিরিক্ত তাপদাহের ফলে সৃষ্ট এই সমস্যার কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তারা। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে ও দ্রুত বৃষ্টি না হলে প্রায় অর্ধেক ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে আমের মুকুল অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম এসেছে। মুকুল আসার পর থেকে বৃষ্টি হয়নি। পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস পেয়েছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে আম ও বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও আমের গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। ভেলাজন এলাকার আম বাগানি রফিক বলেন, স্বাভাবিক নিয়মেই আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এ বছর দীর্ঘ খরায় অন্য বছরের তুলনায় গুটি অনেক বেশি ঝরছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের আকচা এলাকার লিচু চাষি রবিউল বলেন, এবছর আমার লিচু বাগানে মোটামুটি সন্তোষজনক পরিমাণে মুকুল এসেছিল। যা থেকে লিচুর গুটিও এসেছিল ভালোই। তবে, তাপপ্রবাহের কারণে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এবার ভালো ফলন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
বড়বাড়ি এলাকার লিচু বাগানের মালিক আজমল বলেন, আমি ৫ বছরের চুক্তিতে লিচুবাগান ক্রয় করেছি। এই বাগান থেকে কোটি টাকার লিচু বিক্রি করে থাকি। এবছর হয়তো আর সেরকম আশা করা যাচ্ছে না। এবছর খরচও বেড়েছে বেশি। এরকম তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে লিচু বাগানে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উঠন বৈঠক ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা চাষিদের সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। ফলের গুটি ঝরা কমাতে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার প্লাবন সেচের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা গাছে বেশি বেশি ইউরিয়া মিশ্রণ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।