মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

আমারে দেলহে গ্যাদা একটা বাছুর, হ্যার ঠ্যাং ভাঙ্গা। হ্যা বাছান যাইবে না, আমি হ্যা আনি নায়। যেয়ারে বলছে আমনেরে পরে একটা কিন্না দিমু আনে, আমনে এ্যাতো বারাবারি করলেন ক্যা? মৎস্য অফিসের এ্যাক ষ্টাফ কয়, দিমু না তোমারে গরু, য্যা হরতে পারো হইরো যাইয়া! গরুর বকনা বাছুর না পেয়ে সাংবাদিকের‘র ক্যামেরার সামনে কথাগুলো বলছিলেন দরিদ্র জেলে তালিকায় নাম থাকা বামনা সদর ইউনিয়নের পূর্ব সফিপুর গ্রামের ছয়জদ্দিন ফকিরের ছেলে আবদুল ছত্তার ওরফে শাহজাহান। যদিও পরে সুস্থ সবল বকনা বাছুর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
বরগুনার বামনায় নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থানের নিমিত্তে গরুর বকনা বাছুর ও মাছ ধরা‘র জাল বিতরণে অনিয়মে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সুফলভোগী জেলেরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা। অভিযোগের সত্যতা প্রামান পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান।
আবদুল সত্তার আরো বলেন, গরুর এ বকনা বাছুর পেতে প্রত্যেক সুফলভোগীদের কাছ থেকে ষ্ট্যাম্প ক্রয় বাবদ পাঁচশত টাকা করে নিয়েছে উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মচারী। তবে তারা নাম নাম বলতে পারেননি (ওই কর্মচারীর)। তাছাড়া মরাধরা (শুকনো ও ছোট) গরু দিয়েছেন সুফলভোগীদের। এই গুলাই কি সরকার আমাদের সাহায্য দিয়েছেন?
গরুর দাম ও আকার সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, প্রতিটি গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে হবে। নামমাত্র গরু দেওয়া হয়েছে।
ওই একই ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামের জিতেন দাসের ছেলে জেলে সুভাস দাস বলেন, স্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ আমাদের কাছ থেকে পাঁচ শত টাকা করে নিয়েছে, সেই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে আমাদের গরু নিয়ে আসতে হয়েছে। লোকমুখে শুনেছি সরকার থেকে আমাদের ২৬ হাজার টাকা বাজেট ছিলো, আমার এই গরুর দাম ২৬ হাজার টাকা হবেনা । আমাকে যে গরু দেওয়া হয়েছে তার দাম সর্বোচ্চ ১২-১৩ টাকা আছে। বিতরণকৃত ১৬টি গরুর মধ্যে দুগ্ধপোষ্য ছোট গরুও ৫ থেকে ৭টি ছিলো, সেগুলোও সুফলভোগীভোগীরা নিয়ে গেছে।
একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ীর রাখাল বলেন, ফ্লইড, পইন ও টাকাসহ যে মালামাল পেয়েছি তার দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হবে।
সদর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামের হাকিম ফরাজীর ছেলে জেলে আব্দুল রহিম ফরাজী বলেন, আমার গরুটির দাম বিশ হাজার টাকা হবে, এর চেয়ে ছোট গরু দেওয়া হয়েছে। আমার কাছ থেকেও ষ্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ পাঁচশত টাকা নেওয়া হয়েছে।
বামনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) বরগুনার বামনা উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ১৬জন দরিদ্র জেলেদের মাঝে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা দামের মোট ১৬টি বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়। দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮টি গ্রুপে (প্রতি গ্রুপে ৫জন করে) মোট ৪০ জন দরিদ্র জেলেদের প্রতি গ্রুপকে ৬০হাজার টাকার ছন্দি জাল বিতরণ করা হয়। যাতে করে জেলেরা অবৈধ কারেন্টজাল ব্যবহার না করে তাই সরকারিভাবে এই সুতার জাল বিতরণের মাধ্যমে জেলেদের বৈধ পন্থায় মাছ শিকারে উৎসাহিত করা হয়।
গরুর দাম জানতে চাইলে বামনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ত্রিশ হাজার টাকা থাকবে না তো, এখানে ভ্যাট, আইটি যাবে, ওডিটের কিছু খরচ থাকে জানেন তো আপনারা যারা সাংবাদিকতা করেন। তাছাড়া বাজারে বাজারে ১টি গরু কিনতে গেলে শতকরা ৩-৫টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। প্রতিটি গরু সাতাশ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে। ওখানে তো কিছু ড্যামারেজ দিতেই হবে। গরু তো সব একই মায়ের পেটে হয় নাই, দেখা যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে হয়, মোটামুটি একটা গড়ে কিনতে হয়। তবে গরুর দাম কমের অভিযোগটি অস্বীকার করে তিনি বলেন, বর্তমানে গরুর দাম অনেক বেশি, এটি তারা সঠিক অভিযোগ করেনি।
প্রথমে তিনি ১৬ জন সুফলভোগীকে গরু বিতরণের কথা বললেও পরবর্তীতে অসুস্থ গরুর কথা স্বীকার করে ১৫ জন সুফল ভোগীকে গরু দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং পরবর্তী ওই একজনকে গরু দেওয়ার কথা বলেন। তবে ষ্ট্যাম্প ক্রয়বাবদ পাঁচশত টাকা করে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
জালের মূল্যের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভ্যাট ট্যাক্স বাবদ সাড়ে ১০% বাদ দিয়ে বাকিটা তারা বাকিটা পাবেন। তাতে সর্বসাকুল্যে ৫০হাজার টাকার মত জাল পাবে প্রতিটি গ্রুপ। জালের মূল্যের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ওরা ব্যবহার করে কারেন্ট জাল, ওরা কারেন্ট জাল পাইলে খুশি। একটা সুতার জালে প্রায় ৬০ কেজি ওজন, সেটার দাম ১৫ হাজার টাকা হলে সেটা অবাস্তব।
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেবের সাথে মোবাইল ফোনে প্রতিনিধির সাথে কথা হলে তিনি কোন মন্তব্য না করে বিতরণ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিতরণ কমিটির সভাপতি আল ইমরান মোবাইল ফোনে বলেন, গরু ক্রয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, বর্তমানে গরুর দাম একটু বেশি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গরুগুলো ক্রয় করেছেন। তবে অভিযোগের বিষয় সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শেয়ার করুন:

Recommended For You