পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজের ৬০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ে জড়িত থাকায় ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে ভাসমান দোকান বসিয়ে চাঁদা নেওয়ায় প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্যকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ছয়জনকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত রবিবার (৩ মার্চ) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে এক সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত সিন্ডিকেট সদস্যরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সিন্ডিকেট সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, ‘১৮ জন দুটি সেমিস্টার, ৪০ জন তিনটি সেমিস্টার এবং ২ জন ৪ টি সিমেস্টার পরীক্ষা করে দিতে পারবে না। তাদের অপরাধ ছিল পরীক্ষায় নকল করা। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ এছাড়া, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে আটকে রেখে ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগে ৩ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
সিন্ডিকেট সূত্র থেকে আরও জানা যায়, গত ডিসেম্বরে শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসে রাজধানী পুরান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক শিক্ষার্থীকে চেয়ারের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে ১০ হাজার টাকা ছিনতাই ও ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে জড়িত থাকায় চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। জানা গেছে, ফেসবুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে একটি গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্বরে নির্মাণাধীন শতবার্ষিক মনুমেন্ট নিয়ে এক ভিডিও আপলোড করে সেখানে অশ্রাব্য ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজন, গণমাধ্যমকর্মীদের গালিগালাজ করায় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আব্দুল ওহেদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ সময়ে তাকে টিএসসির ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে নিয়মিত কাউন্সেলিং নিতে হবে এবং তার মানসিক মূল্যায়ন বিবেচনায় শাস্তি কমানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়াও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে এক ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে এনে হলে আটকে রেখে নির্যাতন করার ঘটনায় জড়িত থাকায় মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মোনতাছির হোসাইন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপ-সম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ ওরফে তানসেন এবং বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক ফিন্যান্স বিভাগের মোহাম্মদ আবুল হাসান সাঈদিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এদিকে গত জানুয়ারিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক নারী কন্সটেবল ও তার ভাইকে মারধর ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের চারজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী মর্তুজা হাসান খান (ফাহিম), ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ ওরফে রিসাত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সংশ্লিষ্ট থানা, শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবক এবং স্থায়ী ঠিকানায় প্রেরণ করা হবে। বহিষ্কৃত ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় হলে অবস্থান করতে পারবে না। তাদের কৃত অপরাধের জন্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানো এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিন্ডিকেট সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।