মালদ্বীপ যদি তার নীতি পরিবর্তন না করে, তাহলে শিগগির দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্রতম এই দেশটি বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকটে পড়বে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বুধবার এক বিবৃতিতে এ বার্তা দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ঋণদাতা সংস্থা।
গত জানুয়ারি মাসে ভারতের সর্বদক্ষিণাঞ্চলীয় লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে গিয়ে কয়েকটি ছবি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার পোস্টে মালদ্বীপের নাম উল্লেখ না করলেও অনেকে ধরে নেন, তিনি ভারতের নাগরিকদের মালদ্বীপে না গিয়ে লাক্ষাদ্বীপে ছুটি কাটাতে যেতে উদ্বুদ্ধ করছেন। মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রী এই পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানান। তারা মোদিকে ‘ভাঁড়’, ‘জঙ্গি’ ও ‘ইসরায়েলের খেলার পুতুল’ হিসেবে অভিহিত করেন।
মূলত তার পর থেকেই নজিরবিহীন এক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে মালদ্বীপ ও ভারত। মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে যদিও বলা হয়েছে যে এটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিজস্ব অভিমত। মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে এর যোগসূত্র নেই। তিন উপমন্ত্রীকে সরকার সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তাদের পোস্টগুলোও মুছে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ভারতীয়রা। অনেকেই মন্ত্রীদের এসব মন্তব্যের স্ক্রিনশট নিয়ে মালদ্বীপকে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘বয়কট মালদিভস’ হ্যাশট্যাগ এক্স মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর থেকেই পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে মালদ্বীপের। ভারতীয় পর্যটকদের অনেকেই মালদ্বীপের পরিবর্তে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। আইএমএফের মূল বক্তব্য, মালদ্বীপ যদি শিগগিরই পর্যটন খাতকে শক্তিশালী না করে, সেক্ষেত্রে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে সমস্যায় পড়বে দেশটি।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব এবং চীনের সঙ্গে সখ্যতা বৃদ্ধির মধ্যেই এই বার্তা এলো আইএমএফ থেকে। আইএমএফের বুধবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মালদ্বীপ যদি তার নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ কোনো পরিববর্তন না আনে, তাহলে দেশটির অর্থনৈতিক ঘাটতি এবং বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং ঋণ পরিশোধ করতে না পারার উচ্চ ঝুঁকিতে পড়বে মালদ্বীপ।’
উল্লেখ্য, মালদ্বীপের অর্থনীতি প্রায় পুরোটাই পর্যটননির্ভর। বিশেষ করে ভারতীয় পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপ বেশ জনপ্রিয় গন্তব্য এবং এই পর্যটন খাতের কল্যাণেই করোনা মহামারির ভয়াবহ অর্থনৈতিক আঘাত সামাল দিতে পেরেছে দেশটি।
সূত্র : এএফপি