বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির উপর নির্ভর করে চলে এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকা। তবে যুগে যুগে কৃষি আধুনিকায়ন ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কৃষকরা ঝড়-বৃষ্টি রোদ, দিনের পর দিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ফসল ফলান। যার ফলে কৃষিতে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।
এরই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জের অধিকাংশ কৃষকরা এবছর তাদের পতিত জমিতে মৌসুম ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তবে এবার এই অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো দেখা মিললো রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ। কোনোটির রং হলুদ আবার কোনোটির রং বেগুনি। আর এসব ফুলকপি ও বাঁধাকপি কোন প্রকার কীটনাশক ছাড়াই শুধুমাত্র জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে চাষ করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার সবজিগ্রাম নামে খ্যাত সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গ্রামের কৃষক মোঃ শামীম ইসলাম তার ২০ শতক জমিতে ক্যারোটিন জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছে। শামীম ইসলাম জানান, আমি এবছর কৃষি অফিসের সহায়তায় রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি এই ফুলকপির বাম্পার ফলন হয়েছে কোন রোগ বালাই নেই, খরচ কম। শুধু জৈব বালাইনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারেই আমি এই ফুলকপি চাষ করেছি। অন্যান্য ফুলকপির তুলনায় এই ফুলকপি বাজারে ব্যাপক চাহিদা দামও ভালো। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা বিক্রি করছি। এ কপি চাষে আমার খরচ হয়েছে মাত্র ১৫হাজার টাকা। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ফুলকপি বিক্রয় করে খরচের টাকা উঠে এসেছে। মাঠে এখনো ১হাজার পিচ ফুলকপি রয়েছে।
উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রামের নির্মল চন্দ্র রায় জানান, রঙ্গিন পাতাকপি আমি আগে কখনো দেখিনি। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসের উদ্যোগে পরীক্ষামূলক ভাবে ২০শতক জমিতে পাতা কপি আবাদ করি। ব্যাপক ফলন রয়েছে। দাম বেশ ভালো। প্রতি পিচ পাতা কপি বাজারে ১৫টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২০হাজার টাকার পাতাকপি বিক্রয় করেছি। বাজারে অন্য কপির তুলনায় রঙিন কপির চাহিদা বাড়ছে। এখন যা আছে খরচ বাদ দিয়ে এতে বেশ লাভ হবে।
এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, এবার এই উপজেলায় ক্যারোটিনা জাতের রঙ্গিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে এবং বাম্পার ফলন হয়েছে। এইগুলো দেখতেও যেমন আকর্ষণীয় তেমন এটিতে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এটিতে জ্যান্তফিল, ক্যারোটিনেট, ভিটামিন এ থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এই ফুলকপির সাইজ এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক কৃষক এই ফুলকপি চাষের আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আগামী বছর এই উপজেলায় এই ফুলকপি চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করি।
দিনাজপুরের অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবুরেজা মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, বছর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৪হেক্টর জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি আবাদ হয়েছে।ভোক্তাদের মাঝে নিরাপদ উচ্চ মানের সবজি উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।