বিরোধী দলের সাথে ইসলামী আন্দোলনের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। আমারা আমাদের দেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সীমান্তে বিএসএফ যেভাবে বিজিবিসহ বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করছে এবং বাংলাদেশীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ হুমকির মুখে। ইসলামী শিক্ষার উপর ভারতীয় থাবা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। ইসলাম, দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে।

আজ বুধবার সকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘জাতীয় বহুমুখি সংকট উদঘাটন ও নিরসনকল্পে কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক গোলবেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সহকারি মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, এবি পার্টির মহাসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কর্ণেল অব. মশিউজ্জামান, এনডিএম ববি হাজ্জাজ, সাবেক সচিব ও বালাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইয়াকুব হোসেন, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামুল বশির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নাকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ আব্দুর রহিম। উপস্থিত ছিলেন সহকারি মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাসমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্রই সকল শ্রেণি-পেশা ও ধর্মের মানুষের রাজনৈতিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। মানুষের জীবনকে সুন্দর, সফল ও সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে। তাই সময়ের একান্ত প্রয়োজন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন আমির বলেন, বাইরে থেকে আনা মূলনীতি, অসৎ লোভী রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সহিংস দমন-পীড়নমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সিন্ডিকেট কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আর লুটেরাদের কবলে পড়ে বাংলাদেশ সমস্যার অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। মানুষের যাবতীয় অধিকার গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্ষরিক অর্থেই হত্যা করা হয়েছে। রাজনীতিকে সহিংসতা ও নোংরামির চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে রাজনীতিকে দূষিত ও বিষাক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতকে আইন করে লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি খাত বর্গীদের হাতে বর্গা দেওয়া হয়েছে। উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাকে চাঁদাবাজদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশে এক ধরনের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সংবিধান, আইন ও উন্নয়নের ভুয়া আবরণে একক ব্যক্তির এই শাসন ক্ষমতা বাকশালের আধুনিক সংস্করণ হয়ে জাতির ওপরে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসেছে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সীমাহীন দুর্নীতি, চরম দুঃশাসন ও আকাশচুম্বী বৈষম্য একই সূত্রে গাথা। গণতন্ত্র, উন্নয়ন, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে দুর্নীতি হলো এককভাবে বিপজ্জনক বাধা।

তিনি সিন্ডিকেট ব্যবসা সম্পর্কে বলেন, দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করতে পারলে চালের দাম কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা করা যাবে। একই ধারাবাহিকতায় ডাল, তেল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য ৩০% কমিয়ে আনা যাবে। সকল পরিবহনের যাত্রী ভাড়া ৩০% কমানো যাবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও ৩০% কমানো যাবে। উৎপাদন মুখী শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যাবে।

সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকার শিক্ষানীতি ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যা করেছে তাকে কেবল নির্মম গণহত্যার সাথেই তুলনা করা যায়। শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পুতুল খেলার অনিশ্চয়তাকেও হার মানিয়েছে। পুতুল খেলাতেও এতো সিদ্ধান্তহীনতা থাকে না। পাঠ্যপুস্তকে এই অঞ্চলের সাথে ইসলামের হাজার বছরের সম্পর্ককে অস্বীকার করা হয়েছে। মুসলমানদের হানাদার হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের ইতিহাস পর্যন্ত মুছে দিয়ে সেখানে বর্বর ইহুদিদের মিথ্যা বয়ানকে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারের মতো অবৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন জিনিসকে সাধারণীকরণ করা হয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পীর সাহেব চরমোনাই’র বক্তব্যে দেশের মানুষের কথা, দেশের কথা বলা হয়েছে। কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সকল অকল্যাণকর ও ধ্বংসাত্মক কাজ বাদ দিতে হবে। দেশের অবস্থা অত্যণÍ ভয়াবহ। পাকিস্তানীদেরকে আমরা যে জন্য পরিত্যাগ করেছি, তার চেয়ে ভয়াবহ দেশের অবস্থা বর্তশান সরকার করেছে। নারী অপহরণ ধর্ষণ, খুন-খারাপি, গুম, দুর্নীতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এমতাবস্থায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ ছাড়া ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য প্রত্যেককেই লোভ-লালসা পরিত্যাগ করতে হবে। ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। ৭ তারিখের নির্বাচন দেশবাসি ভোট বর্জনের মাধ্যমে সরকারতে বয়কট করেছে। এখন সম্মিলিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে ধাক্কা দিতে হবে।

প্রিন্সিপাল মাদানি বলেন, ভারত দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে দেশের জন্য নয়, ভারতের জন্যই। ৫৩ বছর পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশ থেকে কেবল নিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে কিছু দেয়নি। তিনি বলেন, দেশকে রক্ষা করতে হবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ডান,বাম ও ইসলামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।
মোস্তফা জামান হায়দার বলেন, দেশের এই দুর্দিনে পীর সাহেব চরমোনাই সকল মত ও পথের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। প্রহসনের ডামি নির্বাচন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দেশকে ভয়াবহ সংকটে ফেলে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামিতা শুধু ইসলামেই নয়, অন্যান্য ধর্মেও বৈধ নয়। খ্রিস্টধর্মে বলা হয়েছে, সমকামিরা ঈশ্বরের গজবপ্রাপ্ত। হিন্দুধর্মে বলা হয়েছে সমকামি মহিলা হলে আগুল কেটে বা মাথা ন্যাড়া করে দেয়া এবং ২০০ রুপি জরিমানা করা। সমকামি পুরুষ হলে পানিতে ডুবিয়ে মারা। বাংলাদেশে সংবিধানে সমকামিদের ১০ বছর কারাদন্ডের বিধান এমনকি মৃত্যুদন্ডর বিধানও আছে। ইসলামে সমকামিতার স্থান নেই। শিক্ষা নিয়ে সরকারকে কোন ছাড় দেয়া হবে না।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশ এখন ইবলিসের হাতে বন্দি। এই ইবলিসের সাথে নেই দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ। এখন একটি ধাক্কা দিতে পারলে ইবলিস সরকার, ডামি সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য। পীল সাহেব চরমোনাইর ডাকে দেশের সব ঘরনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়েছে। পীর সাহেব চরমোনাই নেতৃত্বে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপিসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে ডামি সরকার। দেশকে ধর্ষণ ও হত্যার নরকে পরিণত করেছে। জাবির ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণ সেঞ্চুরী করলেও বিচার হয় না। এখন স্বামীকে বেধে স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা। তিনি বলেন, শিক্ষা নিয়েও সরকার খেলছে। দেশের সামাজিক অবক্ষয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। স্মার্ট দেশ গড়ার নামে সরকার দেশকে স্মার্ট অব্যবস্থাপনায় পরিণত করেছে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You