জাল দলিল করার অভিযোগে এক রেজিস্ট্রারসহ ছয়জনের নামে লক্ষ্মীপুরের আদালতে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার বর্তমানে শরিয়তপুর জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে মামলাটি তদন্তের জন্য বিচারক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন লক্ষ্মীপুর তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন। আব্বাস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রায়পুর) আমলি আদালতে মামলাটি করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রায়পুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সফিকুল ইসলাম হাওলাদার, বাদী আব্বাসের সৎ মা হনুফা বেগম, দলিলের সাক্ষী বাবুল হোসেন দেওয়ান, ইউসুফ খান ও বাদীর ভাই সামছুল আলম। বাদী আব্বাস রায়পুর উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের চর মোহড়া গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে। তার মায়ের নাম মৃত খোরশেদ নেছা।
বাদীর আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, মামলার আসামিরা রায়পুরের সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকের সহযোগিতায় দাতার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জাল দলিল তৈরি করেছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করলে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আগামী ২১ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে আব্বাসের মা খোরেশেদ নেছা মারা গেছেন। তার বাবা লুৎফর রহমান এর তিন-চার বছর পর হনুফা বেগমকে বিয়ে করেন। আব্বাসরা ছয় ভাই ও চার বোন। তার বাবা ২০১২ সালে মারা যান। সৎ মা লুৎফর বেঁচে থাকা অবস্থায় মৌখিকভাবে ছেলে-মেয়েদের জমি বণ্টন করে দেন। সে সূত্রেই জমিতে ভোগ-দখলে রয়েছেন তারা। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভাই আবদুর রশিদের কাছ থেকে আব্বাস ছয় শতাংশ জমি (দলিল নং-৪৬৩১) ক্রয় করেন। জমিটি ২৫ বছর আবদুর রশিদের দখলেই ছিল। ক্রয় সূত্রে আব্বাস জমিটি নিজের নামে নামজারি, জমা খারিজ ও খতিয়ানও করেছেন।
এদিকে প্রায় ছয় মাস আগে অভিযুক্ত হনুফার কাছ থেকে জমিটি ক্রয় সূত্রে মালিকানা দাবি করেন ছেলে সামছুল আলম। আর হনুফা তার স্বামীর কাছ থেকে সাফ কবলা মূলে মালিকানা দাবি করে জমিটি বিক্রি করেন। আব্বাস স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বিষয়টি জানায়। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর এক বৈঠকে ২০০৬ সালের ২৬ জুনের একটি দলিল (নং ২৮৭৩) উপস্থাপন করা হয়। এটি মূল কপি বলে দাবি করেন অভিযুক্ত সামছুল। কিন্তু দলিলে আব্বাস ও সামছুলের বাবার নাম লেখা ছিল লুৎফের রহমান। অন্যদিকে লুৎফর রহমান নিজের নাম লেখা ছাড়া পড়ালেখা জানতেন না। তিনি লুৎফর রহমান লিখেই স্বাক্ষর দিতেন। তার স্বাক্ষরে বিক্রি করা জমির দলিলেও লুৎফর রহমানই লেখা আছে। এতে অভিযুক্ত সামছুলের কাছে থাকা দলিলটিতে শিক্ষিত কোনো ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আব্বাস। এছাড়া লুৎফর রহমানের পরিবর্তে অন্য কাউকে দাঁড় করিয়ে জালিয়াতি করে হনুফা বেগম তার জমি লিখে নেন।
আব্বাস উদ্দিন বলেন, জাল দলিল করার অভিযোগে অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রার অমৃত লাল মজুমদার ও দলিল লেখক সফিকুল ইসলাম জড়িত। এজন্য মামলায় তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই। দলিল লেখক সফিকুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি অনেক আগের, আমার মনে নেই। মামলার বিষয়টিও জানা নেই। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি শরিয়তপুর জেলা রেজিস্ট্রার অমৃত লাল মজুমদার।