কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে কিশোর কিশোরী ক্লাবের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন এক কিশোরী।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেবের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী ও তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে কিশোরীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়।
ওই কিশোরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম এলাকার দিনমজুরের মেয়ে। সে ৫ম শ্রেণি থেকে পড়ালেখা করার পর বাবার আর্থিক সমস্যার কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি।
ওই কিশোরী জানায়, তার জন্ম ২০০৯সালে। সে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় আমার পরিবার। বিয়ের পিড়িতে না বসে লেখাপড়া করতে চাই।
জানাগেছে, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটার মমতাজ শারমিন লুনা বলেন আমি গোপন সংবাদ পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করলে নাগেশ্বরী থানার এসসআই মনজুরুল ইসলাম ও রায়গঞ্জ ইউনিয়ন কিশোর কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক হাফিজুর রহমান হৃদয় এবং কেদার ইউনিয়ন কিশোর কিশোরী ক্লাবের সঙ্গীত শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক এর সহযোগিতায় রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে বিয়েবাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়।
এ সময় মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবে না বলে জানান কিশোরীর বাবা মা। অপরদিকে ওই কিশোরীর লেখাপড়া করানোর জন্য যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন কিশোর কিশোরী ক্লাবে কর্মরত জেন্ডার প্রমোটার ও শিক্ষকসহ উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে বেরুবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান আলী বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি কিশোরীর পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। পরে ইউপি সদস্য ও গ্রামপুলিশের সহযোগিতায় মেয়ে ও তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করে নিয়ে তাদেরকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বললে তারা মেয়েকে ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবে না বলে কথা দিয়েছে। মেয়ের পরিবার অত্যন্ত গরিব হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার লেখাপড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।
নাগেশ্বরী থানার এসআই মনজুরুল ইসলাম বলেন ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে আমাদের ওসি স্যারের নির্দেশনায় আমরা দুইজন পুলিশ সদস্য সাথে সাথে কিশোর কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের সাথে ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে কিশোরীর পরিবারকে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জানালে তারা মেয়ের বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আর বিয়ে দেবে না বলে জানিয়েছে।
নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপ কুমার সরকার বলেন, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকে একটা বাল্য বিয়ের সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানাই। পরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের এক প্রতিনিধিসহ আমাদের একটি পুলিশ টিম পাঠাই। তারা সেখানে গেলে জানা যায় মেয়েটার বয়স ১৩-১৪ বছর। সে ৫ম শ্রেণি থেকে লেখাপড়া করেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে বিয়েটা বন্ধ করা হয়।