তালতলীর চরপাড়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালে ঝোপঝাড় থেকে উদ্ধার হওয়া মরদেহ গৃহবধু সুখী আক্তার (১৯) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় পুলিশ গৃহবধুর স্বামী হাসান সরদার, শ্বশুর সাইফুল সরদার, শ্বাশুড়ী ময়না ও চাচাতো দেবর আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার পুলিশ তাদের আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরন করেছে। ওইদিন বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের বরগুনা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে রিমেন্ডে আবেদন করা হয়। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারী তাদের রিমেন্ড শুনানীর দিন ধায্য করেছে আদালত। তালতলী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম খাঁন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার চরপাড়া (নকরি) গ্রামের সাইদুল সরদারের ছেলে হাসান সরদারের সঙ্গে এক বছর আগে গেন্ডামারা গ্রামের বাবুল ফকিরের মেয়ে সুখি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের সঙ্গে গৃহবধু সুখির বুনিবনা হচ্ছিল না। তুচ্ছ ঘটনায় গৃহবধু সুখিকে নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বাশুড়ী এমন অভিযোগ বাবা বাবুল ফকিরের। পরিকল্পনা করে গত মাসের ২৭ জানুয়ারী গৃহবধুর স্বামী হাসান সরদার ও তার শ্বশুর সাইফুল সরদার মাছ শিকারে সাগরে যায়। গোপনে ওই সাগর থেকে এসেই স্বামী হাসান সরদার গৃহবধুকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। পুনরায় আবার তিনি সাগরে চলে যায়। তারা এ হত্যাকান্ড ভিন্নখাতে প্রভাহিত করতে গৃহবধুর মরদেহের পরিহিত বস্ত্র অর্ধেক খুলে রাখে। যেন সবাই বুঝতে পারে গৃহবধুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার দিন গৃহবধু সুখির মরদেহ দেখে স্বামী,শ্বশুর-শ্বাশুড়ী অঝোড় বেগে কান্না করে। যেন কেউ বুঝতে না পারে তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ স্বামী হাসান সরদার, শ্বশুর সাইফুল সরদার, শ্বাশুড়ী ময়না ও চাচাতো দেবর আব্দুল্লাহকে পুলিশি হেফাজতে নেয়। শুক্রবার রাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায় তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
এ ঘটনার শুক্রবার রাতে হত্যাকান্ডের শিকার গৃহবধুর মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শনিবার পুলিশ আটক চারজনকে এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে এবং পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমেন্ড আবেদন করেছেন। ওই দিন বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের বরগুনা জেল হাজতে পাঠানো হয়। আগামী ৬ ফেব্রæয়ারী তাদের রিমেন্ড শুনানীর দিন ধায্য করেছেন আদালত।
তালতলী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম খাঁন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী হাসান সরদারসহ গ্রেপ্তারকৃত চারজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে রিমেন্ড আবেদন করা হয়।
উল্লেখ গত বুধবার রাতে গৃহবধু সুখি আক্তার নিখোঁজ হয়। নিখোঁজর দুইদিন পর শুক্রবার সকালে স্বামী হাসান সরদারের বাড়ীর পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালে ঝোপঝাড়ের মধ্যে গৃহবধুর মরদেহে গলায় মাফলার পেঁচানো, বোখরা পরিহিত এবং ছেলোয়ার শরীর থেকে অর্ধেক খোলা অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ গৃহবধুর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।