কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এটিকে ‘সমলয়’ পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতির ফলে ধান চাষাবাদে শ্রমিক সংকট নিরসন, উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ ও সময় বাঁচবে বলে জানা গেছে।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রাথমিকভাবে উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের মধুপুর বামনেরহাট এলাকায় প্রায় ৩৫ শতক জমিতে ৪৫০০ প্লাস্টিকের ট্রে-তে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা রোপনের বিষয়টি এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশেষ কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে বেলে মাটিতে জৈব সার সংমিশ্রণে প্লাস্টিকের ট্রে-তে ধান বীজ বপন করা হয়। ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে এই বীজ চারা রোপনের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। এতে করে বাড়তি সারের প্রয়োজন হয় না। ট্রে-তে চারা উৎপাদনে জমির পরিমাণও কম লাগে। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার মেশিন দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বাড়ে। একসঙ্গে চারা রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে এবং একসঙ্গে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপনের পর ফসল ঘরে তুলতে ১৪৫ থেকে ১৬০ সময় লাগলেও সমলয় পদ্ধতিতে এর থেকে সময় কম লাগবে।
সমলয় পদ্ধতির ব্যাপারে কথা হয় বামনেরহাট এলাকার বর্গা চাষি আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি জানান, আগে জমি তৈরি করে ধানের বীজ লাগাইছিলাম। এবার মেশিনের সাহায্যে ট্রে-তে বীজ তলা তৈরি করা হয়। এভাবে কখনও আবাদ করিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ১২০ শতক জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি, আশা করি ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
একই এলাকার কৃষক চন্দন সরকার (৫১) ও অমরেন্দ্র নাথ (৬৩) জানান, সমলয় পদ্ধতিতে বীজ বপন করেছি। খরচ নেই বললেই চলে। সারের ব্যবহার করা হয়নি। এত শীতের মধ্যেও বীজতলার কোনো ক্ষতি হয়নি। আশা করি এবার এ পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। ধরণীবাড়ী ইউনিয়ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ৯০ জন কৃষক ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদের জন্য অন্তর্ভুক্তি হয়েছেন। এতে শ্রমিক লাগবে না সব যন্ত্রের মাধ্যমে হবে। এ ছাড়া দ্রুত উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। সমলয় পদ্ধতি চাষাবাদে কৃষকরা লাভজনক হবে বলেও আশা করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে এসব চারা রোপন করা হবে। সমলয় পদ্ধতিতে কাটা-মাড়াই হবে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে করে শ্রমিক সংকট নিরসন হবে। সেই সঙ্গে কম সময়ের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারবে। সমলয় পদ্ধতির ফলে ক্ষেতে রোগবালাই কম হবে বলেও জানান। মোশারফ হোসেন আরো জানান, আগামী ২৭ জানুয়ারি সমলয় পদ্ধতিতে চারা রোপন করা হবে। ওই সময় ২০০ কৃষককে নিয়ে সমলয় পদ্ধতি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত অবগত করা হবে। যাতে তারা আগামীতে এই চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়।