তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগুন সন্ত্রাস করে ভোট উৎসব ম্লান করা যাবে না, যেসব নেতারা এ সব ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজের নির্দেশদাতা তারাও সমান অপরাধে অপরাধী। জনগণের দাবি হচ্ছে, ভদ্রবেশী সুবেশধারী এ সব নেতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা সরকার গঠন করতে পারি, আমাদের প্রধান কিছু কাজের মধ্যে অন্যতম হবে আগুনসন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন করা। একটি সভ্য দেশে এসব চলতে দেয়া যায় না।’
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সমস্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সে জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, সার্কভূক্ত এবং ওআইসিভূক্ত দেশগুলো থেকে শুরু করে অনেক দেশ ও সংস্থা নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বিধায় তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ব্যাপক হারে পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে। আশা করছি, আগামীকাল (৭ জানুয়ারি) দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয় হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের দেওয়ানজী পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।যারা সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা মারছে তাদের নির্মূল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, যারা এই নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে, এদের ব্যাপারে আশা করি আন্তর্জাতিক মহল মুখ খুলবে এবং এই দুষ্কৃতিকারীদের নিবৃত্ত ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে তারাও সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ‘গতকাল ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের চারটি বগিতে বিএনপি-জামাতের দুস্কৃতকারীরা আগুন দিয়েছে। যেভাবে এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে এতে এ পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যু হয়েছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বিএনপি-জামাত ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল, ঠিক একইভাবে বর্বরোচিত হামলা তারা গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে।’
গতকাল ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনার পর বিএনপি একটি আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি করেছে -সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘সমস্ত ঘটনা ঘটিয়ে অস্বীকার করা বিএনপির অভ্যাস। ইতিপূর্বেও একই এলাকায় ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। মা ও শিশুসহ চারজন একসাথে মৃত্যুবরণ করেছে। ওই এলাকায় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস সাহেবের বাড়ি। এর আগের ঘটনা কার নির্দেশে, কারা করেছে, সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগুনসন্ত্রাসের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায়। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট হচ্ছে, নাশকতা করার পর এগুলোর ছবি তোলা এবং ভিডিও করা হয় এবং সেগুলো লন্ডনে পাঠানো হয়। সেগুলো পাঠালে নাশকতাকারীদের দলে পদোন্নতিসহ নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়। এটি কোন রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পাওে না। রাজনীতির নামে এত জঘন্য ও ঘৃণ্য নাশকতা এবং মানুষ পুড়িয়ে মারার মহোৎসব পৃথিবীর কোথাও গত কয়েক দশকে ঘটে নাই, যেটি বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত করে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে যারা পুড়িয়ে হত্যা করে, তারা দেশ, জাতি-সমাজ ও মানুষের শত্রু। বিএনপি-জামাত আজকে দেশ, জাতি-সমাজ ও মানুষের শত্রুতে রূপান্তরিত হয়েছে। তারা গতকাল শুধু ট্রেনে হামলা চালিয়েছে তা নয়, ঢাকায় গাড়িতে আগুন দিয়েছে, বগুড়ায় চলন্ত ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, রাজশাহী মহানগরে একটি ভোট কেন্দ্রের পাশ থেকে ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে, তার আগের রাতে দুটি ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে। চট্টগ্রামেও নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে, এগুলো করে নির্বাচনে যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেই পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য।’
দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহত করতে জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, জনগণের শক্তির কাছে অপশক্তি, দুষ্কৃতিকারীরা কখনো পেরে ওঠে না, তারা অতীতেও পরাজিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। আমাদের সরকার ও দল এই দুষ্কৃতিকারীদের মূলোৎপাটন করতে বদ্ধপরিকর। তারা জনগণের শত্রু, জনগণের শত্রুদেরকে জনগণকে নিয়েই প্রতিহত করা হবে।
সাংবাদিকরা মানুষকে পথ দেখায়, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়, জনমত সংগঠনে ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে আগুনসন্ত্রাসের মতো ঘৃণ্য ও নৃশংস কাজগুলো যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট শতভাগ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত কঠোর এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে এবং ভোট যে শতভাগ অবাধ ও স্বচ্ছ হবে সেই ব্যাপারে জনগণের মধ্যেও বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে। অবাধ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বোতভাবে সহায়তা করছে।’