ইরানে হামলা চালাতে পারে ইসরাইলঃ ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আগামী ২ বা ৩ বছরের মধ্যে ইরানে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল আগামী দুই বা তিন বছরের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করতে পারে বলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। যদিও ইসরায়েল বিভিন্ন সময় এই ধরনের মন্তব্য করেছে তবুও ইরানে হামলার সম্ভাব্য সময়রেখা সম্পর্কে তার বুধবারের বক্তব্য অস্বাভাবিকভাবে স্পষ্ট।

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়ে হুমকি নানা সময়ে দিয়েও রেখেছে ইসরাইল।এবার যেন ইরানে হামলা নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরও পরিষ্কার করল ইসরাইল।

২০১৫ সালে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য ইরানের সঙ্গে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্লান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া।

কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।

এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মূলত ওয়াশিংটনকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি ভেঙে পড়ে। এমনকি চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইরানকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করতে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প।

পরে ২০২১ সালের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর এই চুক্তি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। যদিও এ নিয়ে ইরানের সঙ্গে এসব দেশের কয়েক দফায় আলোচনা হলেও নানা শর্তের বেড়াজালে তা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

আর এরপর থেকেই ইরানিরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে বেশ ত্বরান্বিত করেছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ বেসামরিক ব্যবহারের পাশাপাশি এই প্রক্রিয়াটি শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক বোমার জন্য ইরানকে প্রয়োজনীয় জ্বালানিও দিতে পারে। যদিও পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো এই জাতীয় কোনও ইচ্ছা থাকার থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে তেহরান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান তার ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতাকে অস্ত্র তৈরির মতো গ্রেডে খুব অল্প সময়ে বাড়াতে পারে। কিন্তু সরবরাহযোগ্য ওয়ারহেড তৈরি করতে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে তারা বলছেন এবং এই একই কথা চলতি মাসে ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের কথায়ও প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, বুধবার বিমান বাহিনীর স্নাতক ক্যাডেটদের উদ্দেশে ভাষণ দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। সেখানে তিনি বলেন, ‘দুই বা তিন বছরের মধ্যে, আপনারা পূর্ব দিকে আকাশ অতিক্রম করতে এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় আক্রমণে অংশ নিতে পারেন।’

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করার জন্য প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়ে রেখেছে ইসরাইল। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তেল আবিব থেকে বেশ দূরবর্তী, বিক্ষিপ্ত ভাবে থাকা সুরক্ষিত ইরানি এসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করার মতো সামরিক শক্তি রয়েছে ইসরাইলের।

গত রবিবার ইসরাইল হাইওম সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, আসন্ন ২০২৩ সালের জন্য ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দাদের পূর্বাভাস হচ্ছে, পারমাণবিক ক্ষেত্রে ইরান ‘তার বর্তমান ধীর অগ্রগতির পথেই চলতে থাকবে।

ইসরাইলের একজন সামরিক মুখপাত্র গোয়েন্দা মূল্যায়নের এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দাদের ওই পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ‘ইরান শুধুমাত্র তার নীতি তখনই পরিবর্তন করবে যদি দেশটির ওপর চরম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়; তারপরে তেহরান হয়তো সামরিক গ্রেডে (ইউরেনিয়াম) সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

রয়টার্স বলছে, অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করতে পারে এমন উস্কানি এড়াতে আশপাশের শত্রুদের নিরস্ত করার বিষয়ে ইসরাইলের একটি অস্পষ্ট নীতি রয়েছে। এই নীতির অধীনে ইসরায়েল নিজের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার কোনোটাই করে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে প্রথম এই ধরনের বোমা অর্জন করে ইসরাইল।

ডব্লিউজি/এমআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You