মোবাইল আসক্তি হতে পারে শারিরীক-মানসিক সমস্যা

আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ছাড়া আমাদের এক মুহুর্ত চলা অসম্ভব। দুর-দুরান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য অন্যতম মাধ্যম মোবাইল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ যেমন উন্নত হচ্ছে, ঠিক তেমনি মানুষ মোবাইলের প্রতি আসক্ত হচ্ছে । এই আসক্ত হতে পারে শারিরীক রোগ। সেই সাথে মানসিক রোগও। গবেষনায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে শারিরীক ও মানসিক দুটোই ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

মোবাইল আসক্তিতে বিশ্বের অনেক ব্যবহারকারী শারিরীক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তবে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে,  ব্রেন, মাথা বা গলার টিউমারের কারণ হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের ব্যবহার স্মৃতিশক্তি ও হার্টের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জেনে আসি এমন ৫টি লক্ষণ যা আমাদের কাজের শক্তিকে বাধা প্রধান করছেঃ

১. পিঠে ব্যথাঃ মোবাইল ব্যবহারের সময় আমাদের আঙুল আর হাতই বেশি ব্যস্ত থাকে। কিন্তু মোবাইল চালানোর সময় আমাদের মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় থাকে। যার প্রভাব পিঠ, শিরদাঁড়া, কোমর ও ঘাড়ে পড়ে। অনেকক্ষণ একভাবে বসে থাকার সময় সোজা হয়ে বসে থাকার অভ্যাস থাকেই আমাদের। মোবাইল থেকে সামান্য কিছু সময় মনোযোগ হঠানোর পর পিঠ আর ঘাড়ে সেই ব্যথা অনুভূত হয়।  যে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রেখে ব্যবহার করা উচিৎ।

২. দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াঃ  দীর্ঘ সময় চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়া সম্ভাবনা দেখা দেয়।চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে মোবইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দৃষ্টিহীনতার কারণ হতে পারে। মার্কিন ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, মোবাইলের নীলাভ আলো চোখের রেটিনার দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মাধ্যমে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। এর থেকে মুক্তির উপায় সব সময় মোবাইল স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখার চেস্টা করবেন।স্ক্রিনের ফন্ট সাইজ বড় করে, চোখ থেকে অন্তত ১৬ ইঞ্চি দূরে রেখে এবং একটু পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্রিন থেকে চোখ ফিরিয়ে সবুজ গাছপালার দিকে তাকানোর মাধ্যমে এ সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।

৩. শ্রবণশক্তিহ্রাসঃ মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, উচ্চ আওয়াজে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমে দেখা দিতে পারে শ্রবণশক্তি হ্রাস হওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা।প্রয়োজন অতিরিক্ত সাউন্ডে গান না শোনা, সব সময় হোডফোন গুঁজে না থাকা এবং দীর্ঘসময় মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা কমিয়ে আনা সহ সর্বোপরি সচেতনতাই হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।

৪. চিন্তাশক্তি হ্রাসঃ  অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহারের ফলে চিন্তাশক্তি কমে যায়।সৃজনশীল মেধা কমে যাওয়ার ফলে কোন কিছুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। জাপানের ডকোমো ফাউন্ডেশন ৫টি দেশে জরিপ করে ৭০ শতাংশ শিশুর পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণ হিসেবে মোবাইল ফোনকে দায়ী করেছে। তাই নির্দিষ্ট বয়সের আগে কোনভাবেই শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেয়া যাবে না।মার্কিন ভাইরাসবিজ্ঞানী ড. ডেভরা ডিভাস মনে করেন, মোবাইলের তরঙ্গ রশ্মি শিশুদের স্বাস্থ্যক্ষতির কারণ হচ্ছে। এর থেকে মুক্তির উপায় হলো , যতটা সম্ভব কম মোবাইল ব্যবহার করা। বই পড়া । নিজ নিজ ধর্মের প্রার্থনায় মনোনিবেশ করা।

৫.ঘুমের সমস্যাঃ অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ঘুমের সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। নির্দিষ্ট সময় না ঘুমানো ফলে ঘুমের সমস্যা বিকট আকার ধারণ করেছে। সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার রাতের ঘুম নষ্ট করে দিতে পারে।মোবাইলের এর রেডিয়েশন এর জন্য তন্দ্রাহীনতা, মাথাব্যথা এবং সন্দেহ বা সংশয় বাতিক দেখা দিতে পারে। মানসিক সমস্যারও ব্যাঘাত ঘটে। তাই নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You