বিদ্যুৎচালিত ইজি বাইক ও বর্তমান বাস্তবতা

বিদ্যুৎচালিত তিন চাকা বিশিষ্ট বাহন ইজিবাইক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের শহরগুলোর রাস্তায় এগুলো প্রচুর দেখা যায়। ইজিবাইক বা অটোরিকশা অঞ্চলভেদে এর নামও ভিন্ন। শহরে বলা হয় ইজিবাইক এবং গ্রামের মানুষ এই ইজিবাইকে আবার বলে অটোরিকশা। অটোরিকশা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব একটি যানবাহন, যা চালাতে কোন তেলের প্রয়োজন হয় না। বৈদ্যুতিক চার্জ এর মাধ্যমেই এই অটোরিকশা চালিত হয়ে থাকে। মূলত অটোরিকশা প্রস্তুতকারক হচ্ছে চায়না।

এ রিকশাগুলো ব্যাটারি চালিত হওয়ায় এর গতি সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পার আওয়ার। এই রিকশাগুলো সারারাত চার্জ দেওয়া হয় এবং সারা দিন চালানো হয়। যাতায়াতের সুবিধার্থে গ্রাম অঞ্চলে এই রিকশা গুলো খুবই উপযোগী।

এই তো গেল, বাহনটির পরিচিতি। এবার আসা যাক এর বর্তমান বাস্তবতায়। ইজিবাইক নিয়ে নানান সময় আলোচনা-সমালোচনা হয়েই আসছে। সম্প্রতি দেশ জুড়ে আবার আলোচনায় আসে এই বাহনটি। তা হলো সরকার দেশে জ্বালানী সংকট মোকাবিলায় এবং আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং করাসহ নানান পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দেশ জুড়ে এই বাহনটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপের কথা বলা হয়নি ।

আমি এ প্রসঙ্গটি তুলে আনা মানে এই নয়, আমি এই যানবাহন চলাচলের বিরোধিতা করছি। একটি পরিসংখ্যান দিচ্ছি বাস্তবতার ক্ষেত্রে, সম্প্রতি বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে সহকর্মীরা প্রতিবেদন করেছে, “খুলনায় ইজিবাইক প্রতিদিন গিলে খাচ্ছে তিন লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ”। বাস্তবতা বুঝাতে এই শিরনামটি যথেষ্ট, তারপরও একটু বিস্তারিত বলতে হয়।

একটি ইজিবাইকে প্রতিদিন চার্জ দিতে আট থেকে নয় ইউনিট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাড়ে আট হাজার ইজিবাইকের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ৭৬ হাজার ৫০০ ইউনিট। কিন্তু নগরীতে সাড়ে আট হাজার ইজিবাইকের স্থানে চলে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার ইজিবাইক।

এই পরিমান ইজিবাইকের জন্য বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার ইউনিট। এছাড়াও রয়েছে ইজিরিকশা, মটর চালিত ভ্যান, যার কোন হিসাব নেই। এখানে প্রশ্ন হলো, একটি বিভাগীয় শহরে সাড়ে আট হাজার ইজিবাইকের জায়গায় পঁয়ত্রিশ হাজার চলে কীভাবে । একই চিত্র কিন্তু সারা দেশের । সাধারণত এই বাহনটি চলাচলের অনুমতি দেয় পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন। গ্রামে চলে নিজ উদ্যোগেই । এখন কথা হলো, এই অবস্থার জন্য কারা দায়ী ? কারা যত্রতত্র এই বিদ্যুৎ খেকো যানটির অনুমতি দেয় ? আমরা দেখি গণমাধ্যমে প্রায়শই সংবাদ আসে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ইজিবাইক চলছে ওমুক শহরে । কিন্তু এর প্রতিকার ? নাই ।

এই ইজিবাইক চলাচলের কিন্তু অঘোষিত একটা নিয়ম আছে, বিশেষ করে শহরে, তা হলো, নির্ধারিত স্থান থেকে ৫ থেকে ৭ জন যাত্রী নিয়ে আবার নির্ধারিত স্থানেই নামিয়ে দিবে । কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যাত্রীর তুলনায় ইজবিাইকের সংখ্যা বেশি । অধিকাংশ সময় মাত্র একজন যাত্রী নিয়ে ছুটে চলে ইজিবাইক। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় অসসহনীয় যানজট।

এবার আসা যাক, এই বাহনটি চালায় কারা? আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরাই বেশি এই যানটি চালাচ্ছে। কোন রকম প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স দরকার হয় না এটি চালাতে। এজন্য প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। আবার খুব সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জে মানুষ এক প্রকার কৃষি কাজ ছেড়েই দিয়েছে, আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন অন্য কোন কাজে আগ্রহী না। কিন্তু সামান্য কিছু টাকা হলেই একটা ইজিবাইক নিয়ে নেমে যাচ্ছে সড়কে, যাত্রী থাকুক আর না থাকুক । এতে করে কৃষি বা অন্যান্য উৎপাদনশীল সেক্টর মুখ থুবড়ে পড়ছে।

এদিকে সারা দেশে প্রয়োজনের তুলনায় এতো বেশি পরিমান ইজিবিইক চলছে, যা দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের বিরাট একটি অংশ গিলে খাচ্ছে। তাই সময়ের প্রয়োজনে এই যানটিকে একটি নীতিমালার আওতায় এনে প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যাক চলার ব্যবস্থা করা দরকার। যত্রতত্র চলাচল ও খেয়াল-খুশি মত অনুমতি দেয়ার লাগাম টানেতে হবে এখনি ।

লেখক: নাসির পাঠান, গণমাধ্যমকর্মী
ঢাকা।

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *