বাবার অভাব যিনি ঢেকে রাখেন: জুলহাস আহমেদ

মানুষ জীবনে বেড়ে উঠার পথে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসে। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। কখনও কখনও তাদেরকে অনুসরণ করে আবার কিছু মানুষের কর্মকান্ড জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলে যে আমরা নিজের অজান্তেই তাদের অনুকরণ করতে থাকি। জন্মের পর থেকে এতদূর আসা পর্যন্ত আমার জীবনে আমার বড় ভাইয়ের অবদান অসীম। আমি বলি, আমি আসলে আলাদা কোন ব্যক্তি সত্ত্বা না। আমি আসলে আমার ফ্যমিলির সমষ্টি।আমার ভাই সহ আমার পরিবারের প্ৰত্যেকটা মানুষ আমার জীবনে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। তাই আমি বলি জীবনের সমস্ত অর্জনের কৃতিত্ত্ব এই মানুষটা সহ আমার পরিবারের। আর আমার জীবনের যত খারাপ দিক, অন্ধকার দিক সেগুলো আমার নিজের ব্যক্তিগত অর্জন এবং সেগুলোর দায়ভার একান্তই আমার।

ছোটবেলা থেকেই আমার আশেপাশের মানুষ বিভিন্নভাবে আমার জীবনকে প্রভাবিত করেছে। একেবারে ছোটবেলা আমার বাবা মারা যায় সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত নিজের বুকে আগলে রেখেছে আমার ভাই। আমি যখন অবসর পাই তখন এই মানুষটা কে নিয়ে ভাবি তখন আমার হৃদয় থেকে উঠে এসে মগজে ভীড় করে। আর আমি ক্ষণিকের জন্য হলেও হারিয়ে যাই তার মাঝে।

বাবা মায়েরা সন্তান জন্ম দেন আর তাদের প্রকৃত মানুষরূপে বড় করে তোলেন শিক্ষকেরা। এর পাশাপাশি কিছু মানুষ থাকেন যারা ছায়ার মতো আমাদের জীবনের উপর প্রভাব রাখেন। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তার জীবনের আদর্শ কে? তাহলে তিনি বলবেন বাবা বা মায়ের কথা। আমিও তাদের ব্যাতিক্রম না তবে আমাকে যদি বলা হয় এরপর আপনি কোন মানুষটাকে আপনার জীবনের আদর্শ মানেন তাহলে আমি অবশ্যই আমার বড় ভাই বাহাদুর ইসলামের কথা বলবো। আমার সৌভাগ্য আমি বাস্তব জীবনে এরকম বড় ভাইকে পেয়েছি এবং এখনও তাঁর ছায়াতেই আছি।

আমার বড় ভাইকে নিয়ে যতই বলা হোক না কেন কম বলা হবে। উনার মাহাত্মকে বর্ণনা করতে যাওয়া মানেই আমার কাছে ধৃষ্টতা মনে হয় কারণ আমি উনার ঠিক কোনগুনের কথা বলবো। আর উনি যেসব কাজ আমার জন্য করেছেন সেগুলো তো উনি কোন প্রকার প্রতিদানের আশা করে করেননি। এইতো সেদিনের কথা,গ্রামের খোলা মাঠে দৌড়াদৌড়ি, পুকুরে লাফালাফি, বৃষ্টিতে ভিজে, পাশাপাশি পড়াশোনা করে বেড়ে উঠেছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি স্ট্রোক জনিত সমস্যায় হটাত আমার বাবা মারা যায়। ভাইয়া তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী আমার বোন তখন নবম শ্রেনীর ছাত্রী ছিলেন আমার ছোট ভাইটা তখন আম্মুর গর্বে ছিলেন। আমাদের সাজানো মাগানে যেন কালো মেগের ছায়া নেমে আসলো, সংসারের বড় কর্তা আমার বড় ভাই বাহাদুর ইসলাম বাধ্য হয়ে তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। তারপর তিনি থেমে যাননি সংসার চালানোর পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছেন। আমাদেরকেও লেখাপড়া চালিয়েছেন তাই পড়াশোনাটাকে আমাদের কাছে কখনওই বোঝা মনে হতো না।বাবার অভাবটা কখনো বুঝতে দেন নি আমার ভাই তবে কষ্ট হতো যখন আমার সামনে আমার বন্ধুরা তার বাবাকে ডাকতো বাবা বলে তখন বুকটা ফেটে যেত কিন্তু কি আর করার নিয়তির খেলা মানতে হবে।

আমার বাবা ছিলেন আনসার কমন্ডার মরহুম খলিলুর রহমান তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রায় ১৮ বছর হল বাবাকে হারিয়েছি , মা সাবেক মহিলা সংরক্ষিত ইউপি সদস্যা ছিলেন মোসা: ফজিলাতুন্নেছা সব সময় মানুষের সেবা করতেন বাবা মারা যাওয়ার পরে সাধারণ মানুষ তাকে নির্বাচন করতে বল্লেও তিনি আর নির্বাচনে যান নি, গত ১৫.০১.২১ তারিখ ব্রেন স্ট্রোক করে আমার বোনের বাসা আমতলীতে বসে আমতলী হাসপাতাল থেকে পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল সেখান থেকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। আমার মা এখন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

আমার বড় ভাই ও আমার ভাবির কথা বলে শেষ করার মত নয় আমার ভাবী ছোটবেলা থেকে আমাদের লালন-পালন করেছেন । আমি আমি গর্বিত আমার ফ্যামিলি নিয়ে। আমার ভাই আমাদের রক্ষাকর্তা হিসেবে ছিলেন, আমাদের নিয়ে কেউ যেন কোনো বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে জন্য তিনি সব সময় সচেষ্ট ছিলেন। আমি আল্লাহতালার কাছে দোয়া করি তিনি বেঁচে থাকুক হাজার বছর, আমাদের মাথার উপরের বটবৃক্ষ হয়ে।

লেখক: জুলহাস আহমেদ

সাংবাদিক, বরগুনা।

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *